২০১৩ সালে আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন বিয়ে হয় আমার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বাবা ঢাকাতে চাকরি করতো মা ঢাকায় বাবার সাথে থাকতো ।আমরা ছিলাম দুই বোন।
আমি দাদা দাদির কাছে থাকতাম গ্রামে। আমি যখন সেভেনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিচ্ছি সেই সময় দাদা বলে আমাকে নাকি বিয়ে দিয়ে দিবে। পাত্র পক্ষ থেকে দেখতে আসবে। দাদি ফুপি ওরা আমার দাদাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করে।
যে জান্নাতের মা বাবা কেউ এখন নেই তাকে কিভাবে আপনি বিয়ে দেন।
কে শুনে কার কথা ছেলে ভালো, ছেলের বংশ ভালো। জান্নাত সে কে সুখে রাখবে এটি দাদার কথা।
মা বাবা কে কল দিয়ে সবকিছু বলে দাদা। বাবা কিছু বলে নি কিন্তু আমার মা আমাকে এখনি বিয়ে দিবে না। মা বলে মেয়েটি এখনো ছোট জ্ঞাণ বুদ্ধি কম। এখনকার যুগের মেয়েদের মতো জান্নাত নয়। একদম সহজ সরল। এখনি তাকে বিয়ে দিবো না আপনি না করে দেন বাবা ওদের। এতকিছু বলার পর ও দাদা উনার কথার পিছুটান হোননি। বিয়ে আমাকে ওখানেই দিবে।উনি মারা যাওয়ার আগে আমাকে সুখী দেখে যেতে চান। এই নিয়ে অনেক ঝগড়াঝাঁটি হয় দাদার সাথে। অবশেষে মা ও উনার কথায় রাজি হয়ে যান।এক পর্যায়ে বিয়েটি হয়ে যায়।
কিন্তু যেই পরিবারের সাথে বিয়ে হয় তারা ছিলো অর্থলোভী মানুষ।
বিয়ের কিছুদিন না যেতেই টাকা পয়সার জন্য নানান রকমের কথা শুনাতো আমার চেয়েও ভালো ডিভোর্সী মেয়ে পেতো, টাকা পেতো,জমি পেতো, ওখানে কেনো বিয়ে করালেন না, এটি তাদের আফসোস। অনেক নির্যাতন করতো বাড়িতে টাকার কথা বলি বৈঠক বসে।
আমার দাদা বলে এটি তো কথা ছিলো না। বিয়ের আগে তো বলেছিলেন কিছুই লাগবে না শুধু মেয়েটি কে চান আপনারা।
মেয়ে ছোট বলে বলেছিলেন আমাদের ঘরেও মেয়ে আছে ওদের যদি সবকিছু শিখাতে পারি তাহলে সাবিহা কে কেন পারবো না।আর আপনারা তো জানেন ওদের অবস্থার কথা তাহলে এখন কেন টাকা টাকা করেন।
এসব বলার পর তারা আমাকে নিয়ে যায় বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছে মতো গালিগালাজ করে।
আমার দাদা ওদের অপমান করেছে এর শাস্তি আমাকে ভোগ করতে হবে। ঠিকমতো খাবার খেতে দিতো না কাজ করাতো শুধু। একটির পর একটি কাজ দিয়েই রাখতো। আর আমার বাবার বাড়ি থেকে কিছু পাঠালে আমাকে শুনাইতোনা।
তার পরিবার ছিলো অর্থলোভী সে ছিলো নারীলোভী। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলতো।তার কাজের সূত্রে তার সাথে ঢাকায় এসেছিলাম,, তখন তিতুমীর কলেজের এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলতো। আমি তখন ফোন সম্পর্কে বুঝতাম না, পাশের বাসার ভাবির কাছে ফোনটি নিয়ে গেলে সে রেকর্ড চালু করে দেয়। আরেকদিন সকালে যখন সে গোসলে যায়, আমি তখন ফোনটি নিয়ে ভাবিকে দিলে, ভাবি সব রেকর্ড শুনায়। সেদিন ওদের দেখা করার কথা ছিলো। দুজন দুজনকে বলছে কি রঙের ড্রেস পরবে। আমি চুপচাপ দেখি তার ঠিক সেভাবেই রেডি হওয়াটা। সে যাওয়ার পর ভাবি ওই মেয়েকে ফোন করে বলে,, তুমি যার সাথে প্রেম করো, তার ব্যাপারে কি জানো?
সেই মেয়ে বলে,জানবো না কেন? সে তার বোনকে নিয়ে থাকে। বউকে শেষে বোন বানালো।সবকিছু যখন ভাবি ওই মেয়েকে খুলে বলে পরে তো আর দেখা করে নাই। সে যখন বাসায় আসে,,,দেখি রাগে লাল হয়ে আছে, পাশ থেকে মোটা লাঠি নিচ্ছে আমাকে মারার জন্য। আমি দৌড়ে পাশের ভাবির বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরি। এমন করে চলছিলো দুদিকের অত্যাচারে। তারপর গিয়ে সে আমারি জেঠাতো বোনের সঙ্গে পরকিয়াই জড়ায়। কত কাহিনির পর আমার বোন বলে জান্নাতকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমি তোমাকে তিন লাখ টাকা দিবো আর ফার্নিচার দিয়ে বিয়ে করবো। তখন বিয়ের দেড় বছর, বিয়ের এক বছরে বাচ্চা পেটে। আর বাচ্চা পেটে থাকতে ছাড়াছাড়ি। আরো কত কাহীনি,, যেগুলো মনে পরলে শরীর গরম হয়ে যায়। মেয়ে হলো তার খবর নিলো না।
আজকে আমার মেয়ের সাত বছর,, কখনো মেয়েটির জন্য তার কোন আগ্রহও দেখিনি। তবে এখন সে বলে তার কাছে ফিরে যেতে তবুও মেয়ের জন্য কিছুই বলে না। আমি এভাবেই খুব ভালো আছি। আমার জীবনের একটি লক্ষ্য মেয়েটিকে আগলে রেখে মানুষের মতো মানুষ করা। বাবার ভালোবাসা আমি দিতে না পারলেও যেন অভাববোধ না করে। বিয়ে শাদির কথা ভাবলেও অন্তর কেঁপে ওঠে। নিজের জীবন শেষ হলেও মেয়েটিকে আমি নিঃস্ব করতে চাইনা। কখনো যদি কল্পনার মতো কোন দ্বীনদার কেউ একজন মেয়েকে ভালোবাসে মেনে নিতে পারে, তাহলে তখন হয়তো নতুন একটি ভোরের দেখা মিলতে পারে নতুন উদ্যোগে। আর নয়তো যেমন আছি বেশ আছি দীর্ঘশ্বাসকে সাথে নিয়ে। এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের সস্তা আবেগে ছোট্ট একটি কিশোরীর প্রাণের পুরো জীবনটি আধারে ডুবিয়ে সেও ডুবে গেলো। এরকম হাজারো চিত্র আছে, অন্তীমকালে নিজের কবর জীবনের ভাবনা দূরে রেখে ছেলে মেয়ে কি'বা নাতী নাতনীর বিয়ে দেখার ভাবনা আসে। অপরিপক্ক একটি প্রাণকে তাড়াহুড়োই ঠেলে দেয় একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতে।
লেখাঃIsrat Jahan Sauda
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন