বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২

গল্প: একটা ডিভোর্সি মেয়ের কষ্ট

আমার বিয়ের ঠিক এক বছরের মাথায় ডিভোর্স হবার পরে স্থান হয় বাপের বাড়িতে। মাথায় এক পৃথিবী টেনশন এবং পাড়া প্রতিবেশিদের আড় চোখে তাকানো বিষয়টি জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রেই। 

মানে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে সবাই এমন ভাবে যেন সে দশটি খুন করে এসেছে, তারপর সকলে এমন ভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিতে আসে যেটা রীতিমত কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা সমতুল্য।

একটা ডিভোর্সি মেয়ের কষ্ট
ডিভোর্সি নারী



কেউ কেউ এসে বলবে– স্বামীর অত্যাচার সয়ে আমরা আজ এতগুলি বছর সংসার করে এসেছি, কোথায় আমরা তো ডিভোর্সের কথা ভাবিনি, আর একালের মেয়েদের পান থেকে চুন খসলে আর সেই স্বামীর সংসার করা যাবে না, অতিরিক্ত আহ্লাদে যা হয় আরকি।

সমাজের কেউ কেউ ডিভোর্সের আসল কারণ না জেনেই বলবে– হুট করে চলে তো এলি, এবার পচে মর, দেখি কোন রাজপুত্র আসে তোকে বিয়ে করতে। 

আবার কেউ বলবে– নিশ্চয়ই মেয়েটির দোষ, স্বামী সংসারে সে মানিয়ে থাকতে পারেনি। এমন মেয়ের দশটি বিয়ে হলেও কোনো খানেই সে সুখী হতে পারবে না। 

এই টাইপের কথাবার্তায় একটি ডিভোর্সি মেয়ে আরও আরও বেশি ডিপ্রেশনে ডুবে যায়, কোনো কোনো মেয়ে আবার আত্মহত্যা করার মতো চিন্তা করে অকালে ঝরে যায়। 

ডিভোর্সের অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদেরও দোষে ডিভোর্স হয়, মেয়েদের যে একেবারে দোষ নেই তা বলছি না।

সংসার জীবন শব্দটি আসলেই সেখানে একটি মেয়ের জীবনে স্বামীর ভূমিকা অপরিসীম। এবং সংসার জীবন সুখের হতে দুজনেরই মনের মিল, মতের মিল, একজন অন্যজনকে বোঝাটাও একান্ত দরকারী। 

যেখানে শুধু স্বামী সবক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে চলতে চাইবে, স্ত্রী মূল্যহীন, সেখানে সুখের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 

আবার যেখানে স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বেশি বুঝতে চাইবে, স্বামীকে মূল্যায়ন কম করবে সেখানেও সুখের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। 

অতএব দুজন দুজনের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, দু'জন দুজনকে বোঝার বিষয়টিতে যেখানে ঘাটতি নেই, সুখ সেখানেই এসে ধরা দেয়। মনে রাখতে হবে স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। 

যে মেয়েকে কেন্দ্র করে এই লেখা, সেই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এত রাত জাগার কারণ কি? সে বললো মানসিক টেনশন পাশাপাশি পাড়াপ্রতিবেশি বাদেও নিজের পরিবার থেকেও দুএক কথা শুনতে হয় যেগুলো মনটিকে ভেঙে আরও বেশি পরিমাণে গুড়িয়ে দেয়। এইরকম সিচুয়েশনে একটি মেয়ের সবচেয়ে বেশি দরকার পরিবারের সাপোর্ট সেটি কজন বোঝে। তিনবেলা পেট ভরে খাওয়ালেই দ্বায়িত্ব পালন হয়ে যায়না সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। 

মেয়েটির যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার সাথে মেয়েটির বয়সের গ্যাপটি বেশি থাকলেও মানিয়ে নিয়েছিল মেয়েটি। প্রতিটি মেয়ের জীবনেই পরিবারের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে গন্য করা হয় আজও। 

কয়েকমাস যেতেই তার স্বামীর জীবনে স্বামীর প্রাক্তন প্রেমিকার নতুন করে আত্মপ্রকাশ। কথায় কথায় সেই প্রাক্তনের সাথে তুলনা, সে তোর থেকে দেখতে সুন্দর, সে তোর চেয়ে শতগুণ ভালো, তাকে পেলে জীবনটি আরও সুন্দর হতো, এসব কথাবার্তা একটি মেয়ের কাছে কতটি যন্ত্রণার সেটি সেই মেয়ে বোঝে।

চোখের সামনে প্রাক্তনের সাথে স্বামী দিনরাত বিজি থাকলে কোন মেয়ের ভালো লাগে, বা সহ্য করতে পারে। এইসব বিষয়ে বাধা দিতে গেলে তখন গায়ে হাত পর্যন্ত তোলে।

এরকম পরিস্থিতিতে একটি মেয়ে বুঝে যায় স্বামীর কাছে এখন তার অধিকার কতটুকু। এভাবে কমাস কাটার পরেই মেয়েটি ডিভোর্সের চিন্তা করতে বাধ্য হয়।

অবশেষে ডিভোর্স। 

ডিভোর্স মানেই মেয়েটির দোষ এরকম না ভেবে আগে জানার চেষ্টা করুন আসলে কি ঘটেছিল। একটা ডিভোর্সি মেয়ের কষ্ট।

আর প্রতিটি মেয়ে চায় জীবন দিয়ে হলেও শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত সংসার টিকিয়ে রাখতে, কিন্তু নিয়তির নির্মমতায় বহু মেয়ে হেরে যায়, স্বপ্ন ভালো ভঙ্গ হয়।

একটি ডিভোর্সি মেয়ে জানে সংসার ভাঙ্গার যন্ত্রণা, তাই দ্বিতীয় বার সুযোগ পেলে সে আরও বেশি সতর্ক হয়, দ্বিগুণ ভালোবাসায় আবার স্বপ্ন সাজায় সংসার সাজানোর। 

ডিভোর্সি মেয়েদের বুঝান এটি জীবনের একটি এক্সিডেন্ট মনে করে ভুলে যেতে, জীবনে উত্থান পতন থাকবেই, ভেঙে না পড়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আর তাদেরকে ডিভোর্সি মেয়ে না বলে শুধু মেয়ে বলতে অভ্যস্ত হন, যখনই তাকে বলবেন ডিভোর্সি মেয়ে তখনই মেয়েটির পেছনের ক্ষতটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই বাদ দিন বলা ডিভোর্সি মেয়ে। 


সংগৃহীত

হিমিকা হিমি


আরও পড়ুন:

মেহজাবিনের সংসার

ঘরেই ঘী বানাবেন যেভাবে

সবচাইতে কঠিন কাজ হচ্ছে মানুষ চেনা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন