রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২২

ভুতুড়ে তেঁতুল গাছ

মাছ ধরার জন্যে আমার ভীষণ শখ ছিলো, বর্ষার সময় গ্রামে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত তাই তো বাবা মায়ের নিষেধ করা শর্তেও সন্ধ্যা হলেই বের হয়ে যেতাম মাছ ধরতে।

বাবা মা বলতো রাতে মাছ ধরা নাকি ভালো না মাছের সাথে অনেক ভুতপ্রেত আসে এইসব বলে আমাকে তারা ভয় দেখাতো। আসলে আমি যতদিন মাছ ধরতে বের হয়েছি, কোনদিনই খালি হাতে আসি নি। আর এইজন্যই মাছের প্রতি আমার লোভ হয়ে গেছে।

আসলে আমি তো বুঝতেই পারিনি যে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। তো চলে যাচ্ছি ঘটনায়।

একদিন রাতে আমি মাছ ধরতে বের হয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে আমি যে কতদূর চলে গেছি বুঝতেই পারিনি। মাছ দেখতে যাচ্ছি কিন্তু একটি মাছও মিলছে না। কিছুই বুঝতে পারছি না এমন তো কখনো হয় না। এতো দূর পর্যন্ত আমি আসলাম একটি মাছও মিললো না।


ভুতুড়ে তেঁতুল গাছ গল্প


একটু দূরে আমি দেখলাম একটি চায়ের দোকান খোলা আছে। ভাবলাম ওখানে যাই একটু চা টা খেয়ে আবার মাছ দেখা শুরু করবো। দোকানে গেলাম দেখলাম দোকানদার ছাড়া আর একটি কাস্টমারও নাই।

দেখে আমি একটু অবাক হলাম।

এতো রাত, এই নির্ঝন এলাকায় উনি একা একা বসে আছেন। যাই হোক চা খেলাম আসার সময় ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম চাচা ঘড়িতে কয়টা বাজে? বললো ১২টা বাজতে আরও ১৫মিনিট বাকী আছে। ওখান থেকে ঘুরে চলে আসলাম।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর সামনে একটি পুকুরের দেখা মিলে। পুকুরের শেষ মাথায় ছিল একটি বড় তেতুলের গাছ।

গাছটির দিকে তাকাতেই আমার কেমন জানি একটি অদ্ভুত রকমের ফিল আমার মনে কাজ করতে শুরু করলো। একটু ভয় ও পেলাম। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর আমি দেখলাম তেতুল গাছটির নিছে পানিতে কিছু একটি লাফাচ্ছে তখন ভাবলাম হয়তো মাছ তাছ হবে দৌড়ে গেলাম দেখলাম ওখানে। কিছু নেই ভাবলাম হয়তো লাইট মারতেই চলে গেছে। আমি যখন হাঁটতে যাবো দেখলাম আবারও লাফাচ্ছে এবার মনের ভিতরে একটু ভয় কাজ করতে শুরু করলো। আবার ঘুরে তাকালাম দেখলাম কিছু নেই। কি আশ্চর্য এতো তাড়াতাড়ি কি করে একটি মাছ উধাও হতে পারে।

এটি ভেবে আবার হাঁটা শুরু করি। একটু দূর আসতেই কে যেন আমাকে পিছন থেকে ডেকে বলছে কি বেপার মাছটি নিবেন না। এই কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি কেউ নাই। সব একদম নিস্তব্ধ। ভাবতে লাগলাম কি ব্যপার, কি হতে চলছে আমার সাথে। এটি ভাবতে ভাবতে আমার হঠাত চোখ পড়লো তেতুল গাছের উপরে। তেতুল গাছের উপরের দিকে তাকাতেই যা দেখলাম আমার মনে হলো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।

দেখলাম তেতুল গাছের উপরে সাদা কাপড় পড়া কোন একটি মেয়ে বসে আছে। তার চুল গুলো ছাড়া শুধু চোখগুলো দেখা যাচ্ছে। মুখটি ভিষণ রকমের কালো।

ও একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসছে। তখন আমি ভয়ে দৌড় দিতে যাবো কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার পা যেন আর চলতেছে না। কেউ যেনো আমার পা দুটো বেঁধে রাখছে। আর ও হাসতে হাসতে আমার দিকে এগিয়ে চলে আসছে। তার চোখগুলো ছিল লাল টকটকে। যেনো তার চোখ থেকে আগুন টপটপ করে পরছে। এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।

সকাল বেলা যখন আমি চোখ খুলি। দেখলাম আমার পাশে মা বাবা ভাইয়া সব বসে আছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোর রাতে এতো দূরে যাওয়ার কি দরকার ছিল।

পরেরদিন আমি ওই এলাকাতে যাই এবং যে দোকানে চা খেয়েছি ওই দোকানদার চাচা কে জিজ্ঞেস করলাম ওই তেতুল গাছের কথা। তিনি আমায় বললো বাবা আমি তো তোমায় অজ্ঞান হওয়া অবস্থা ওখান থেকে তোমাকে তুলে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই।

আর ওই তেতুল গাছটির নিচে তো দিন হলেও কোন মানুষ যায় না আর তুমি এতো রাতে কেন গেছো।

উনি আমাকে বলে এখানে নাকি একটি মেয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে মারা যায়। আর যে মেয়েটি মরেছে ওই মেয়েটি নাকি তেতুল গাছের উপরে বসে বসে তেতুল খেতো। ওই মেয়েটি মারা যাওয়ার পর থেকেই নাকি এমন ঘটনা ঘটেই চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন