সেদিন ক্লাস শেষ করে আমি বের হয়েছি। গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্যে আমি অপেক্ষা করছিলাম। সেই ফাঁকে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে মাত্র ফেসবুক লগইন করেছি। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার সমবয়সী একটি মেয়ের আগমন। দেখে বুঝা যাচ্ছে আমার মতোই স্টুডেন্ট। হয়তো কোনো কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়েছে। মেয়েটির চোখে মুখে অস্থিরতা, কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷
আমার সামনে এসে আমতা আমতা করে বললো,আপু আপনার ফোনটা একটু দিবেন? বাড়িতে একটা জরুরি কল করতাম। আসলে আমার মোবাইলটা বাসায় ভুলে রেখে এসেছি৷ বাসায় ফিরতে একটু দেরি হবে তো, তাই আম্মুকে সেটা জানাতাম।
মেয়েটির কথা শুনে আমি বললাম,
হ্যাঁ অবশ্যই! কোনো সমস্যা না তুমি কল করতে পারো। বলেই আমার হাত থেকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে মেয়েটির কাছ থেকে ৩-৪ হাত দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কথা শেষ করে ধন্যবাদ দিয়ে মেয়েটি ফোনটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো। আমি ডায়াল লিস্ট থেকে নাম্বারটি ডিলেট করে গাড়ির অপেক্ষা না করে মোবাইলটি ব্যাগে রেখে হাঁটা শুরু করলাম।
রাত ১০ টার দিকে অচেনা নাম্বার থেকে পরপর তিনটি কল আসলো কিন্তু রিসিভ করিনি। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলে সচরাচর আমি রিসিভ করি না। তো ৪ নাম্বার কলটা রিসিভ করলাম। একজন ভদ্রলোক সালাম দিলেন৷ কণ্ঠ শুনে আন্দাজ করলাম একটি যুবক ছেলে। আমি সালামের জবাব দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে উনি সেটা এড়িয়ে আমার ভালো মন্দের খবর জানতে চাইলেন। কিন্তু আমিও সেটার উত্তর না দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি কোথায় ফোন দিয়েছেন? উনার উত্তর ছিলো 'পরে জানতে পারবেন। আর কোনো ভুল জায়গায় ফোন দেই নি ঠিক জায়গায় ফোন দিয়েছি'। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম 'কে আপনি, পরিচয় দেন? তবুও উনি সেটার কোনো উত্তর দিচ্ছেন না'।
এক সময় বিরক্ত হয়ে আমি ফোনটা কেটে দেই। তারপর আবার কল আসে৷ আমি ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে যাই৷
সকালে ঘুম উঠে দেখি গুনেগুনে ৬৩ টা মিসকল আসছে। বাবাগো বাবা তার এত ধৈর্য্য। বেচারা হয়তো ভেবেছিলো ইচ্ছে করে রাগে ফোন ধরিনি। তাই মান অভিমান ভাঙ্গাতে এত্ত গুলি কল করেছিল। কিন্তু সে কি আর জানতো সেই সময় আমি ঘুমের রাজ্যে ছিলাম।
সকাল বেলা নাস্তা করতে বসছি তখন আবার কল শুরু হয়েছে। পড়লাম এক মহা মুশকিলে। কি আর করা, বাধ্য হয়ে করলাম রিসিভ। কিন্তু তবুও সে তার পরিচয় দিচ্ছে না৷ আমিও তো নাছোড়বান্দা কম না, যতক্ষণ না পরিচয় দিবি ততক্ষণ আমার মুখ থেকে ভালো মন্দ একটা শব্দও বের করতে পারবি না 'কে আপনি' ছাড়া।
অবশেষে বেডা মুখ খুললো। পরিচয় দেওয়া থেকে শুরু করে নাম্বার পাওয়া পর্যন্ত গল্পটা বললো। গতকাল একটি মেয়ের মাধ্যমে টেকনিক খাটিয়ে আমার নাম্বার নিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে নাকি সে আমাকে ফলো করে আসছে।
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কাজটি কে করছে। উপকারের প্রতিদান তুই এভাবেই দিলি বইন?? এইটা কোনো কথা হতে পারে??
আরে বেডা তর যদি আমার নাম্বার এতই প্রয়োজন ছিল তাহলে সরাসরি আমাকে বলতে পারতি, আমি নিজেই দিয়ে দিতাম। কেন শুধু শুধু আরেকটি মেয়েকে হয়রানি করালি? এখন যদি সত্যি সত্যি কোনো মেয়ে বিপদে পড়ে এসে সাহায্য চায় তাহলে আমি কি খুব সহজে বিশ্বাস করে সহযোগীতার হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারবো, বল? তদের এই চালাকির কথা কি আমার একটুও মনে পড়বে না? কেন এমনডা করলি ভাই??? কি লাভটা হলো তোর? সেই তো যেতে হলো ব্লক লিস্টে।
লেখক: মাহদিয়া মাহি
{সত্য ঘটনা অবলম্বে}
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন