আমি কোনোদিন আমার বাবা ভাই কে ছেঁড়া লুঙ্গি পড়তে দেখিনি। কিন্তু আমার স্বামীকে আমি দেখেছি ছেঁড়া লুঙ্গি কিভাবে পেঁচিয়ে আড়াল করে পড়তে হয়।
সেইদিন গুলোতে আত্মীয়রা সকলে হারিয়ে গিয়েছিলো। চিরচেনা মুখগুলি ঝাপসা হয়েছিলো।
যেদিন আমার বাড়িতে রান্না করার মতো কিছু থাকতো না, সেদিন কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ ভেজে ভর্তা করে গরম ভাত মাখিয়ে খেতাম।
আর আমার ভাইয়েরা তখন খোঁজ নিতে ভয় পেতো।
মাস্টার্স শেষ করা ছেলেটি যখন কোন জব না পেয়ে গার্মেন্টসের অল্প বেতনের চাকরিতে ঝুঁকেছিলো, আমার বাবার বাড়ির সব আত্মীয়রা তার জন্য লজ্জায় কুঁকড়ে যেতো।
সেবার ঈদের পরদিন বাবার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন আমার স্বামীর অবহেলা পরিমাণে এতটায় বেশি ছিলো যে সে বাড়িতে আর এক বছরের মতো আর পা রাখিনি।
আমার তিন বছরের বাচ্চা ছেলেটি ভাসুরের ছেলের সাথে খেলতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে বাম পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলো। আমাদের তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ডাক্তার, ঔষুধ ভালো চিকিৎসা করার মতো কোন সামর্থ্য ছিলো না। বাধ্য হয়েই আমার স্বামী ভাসুরের কাছে হাত পেতেছিলো। কিন্তু কিঞ্চিৎ সাহায্যও আমাদের কেউ করেনি। নিরুপায় হয়ে আমি অবশিষ্ট কানের দুল জোড়া বিক্রি করেছিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ আজ আমাদের সব আছে। দূর্দিনগুলি কাটিয়ে উঠেছি। আর প্রিয় থেকে প্রিয় মানুষগুলোর মুখ চিনে রেখেছি।
গত সপ্তাহে আমার ভাই এক জোড়া ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়িতে এসেছিলো। ভাইয়ের বউ প্রায়শই কল দিয়ে বলে আমরা কবে যাবো বেড়াতে।
ভাসুরের শরীরে নানা ধরনের রোগের উৎপাত। তার চিকিৎসার জন্যে গত মাসেও টাকা পাঠানো হয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার স্বামীর ব্যবসাটিও বেশ বড়-সড় হয়েছে। সাথে মান-মর্যাদা, প্রতিপত্তির বুঝি কমতি নেই। সেইসব আত্মীয়রা আমাদের নিয়ে এখনও কানাঘুঁষা করে তবে হয়ত ইতিবাচক কিছু।
আমার স্বামীর সেই ছেঁড়া লুঙ্গিটা আজও আমি আলমারিতে অনেক যত্নে তুলে রেখেছি। সেদিনও লুঙ্গিটা দেখলে আমার যতটা কষ্ট হতো আজও ঠিক ততোটাই কষ্ট হয়।
ব্যবধানটি শুধু দুর্দিন আর সুদিনের। সময় চলে যায় তার আপন গতিতে, কিন্তু চিনিয়ে দিয়ে যায় অনেক কিছুই।
রাইটার: সোনিয়া শেখ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন