বিয়ের রেজিস্ট্রি খাতায় যখন আমাকে সিগনেচার করতে বলে, তখন আমার বুক ভেংগে কান্না আসে। আজ আমার দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে, তাও জ্যাঠাতো ভাসুরের সাথে। আমি তো এমনটি কখনো চাইনি সব সময় রবিন কে নিয়ে থাকতে চেয়েছি। সারাটা জীবন ওকে নিয়ে সুখের সংসার করার কথা ভেবেছি। তাহলে এরকমটা কেন হলো আল্লাহ আপনি আমাকে এরকম পরিস্থিতিতে কেনো ফেললেন।
রবিন দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর আমার বাবা-মা চেয়েছিল আমাকে, আর আমার মেয়ে রিহাকে সহ নিয়ে যেতে। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমায় যেতে দেয়নি। প্রায় এক বছর পর্যন্ত আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি। চারদিকে সবাই বলাবলি করতেছে একটা মেয়ে নিয়ে কীভাবে ও সারা জীবন কাটাবে। আরও অনেক কথা।
এ কথা গুলো শুনে আমার জেঠাশ্বশুর আর জেঠিশাশুড়ি সিদ্ধান্ত নেন, ওদের বড় ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে এ বাড়িতে রেখে দিবেন।
এটা আমি কখনো চাইনি।
আমি আমার রবিনকে অনেক ভালোবাসি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। রবিনের বাড়িতে বাবা, জেঠারা এখনো সবাই এক সাথে থাকেন। রবিনের বড়ো জেঠাতো, চাচাতো দুই-তিন ভাই এখনো বিয়ে করেনি। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, তাই রবিন ওদের বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন।
তার কিছু মাস পর আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই আমার বাবাকে বুঝিয়ে সবাইকে মানিয়ে নেন। আমি রবিনদের বাড়িতে এসে বুঝতে পারি, যৌথ পরিবার কেমন হয়। কীভাবে সবাই এক সঙ্গে বাঁচতে হয়, কীভাবে সুখে দুঃখে এক সঙ্গে থাকতে হয়। এ বাড়ির শ্বশুর, শ্বাশুড়িরা বউদেরকে, মেয়েদের মতো ভালোবাসেন।
সব কিছু ভালোই চলছে আমাদের মেয়ে হয়, ওর বয়স ৬ মাস চলছে, একদিন কাজের জন্যে রবিনকে ঢাকা যেতে হয়। ভালোভাবে কাজ সেরে বাড়ি আসার পথেই ওদের গাড়িরটার এক্সিডেন্ট হয়। আর রবিন সেখানেই মারা যায়। আমার পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে গিয়েছিল। নিজেকে কোনমতেই সামলাতে পারছি না। ও আমাকে কথা দিয়েছিলো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। কিন্তু ও আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলো।
আমি রবিনকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? আমার মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব? কি করবো? মেয়েটা সবে মাত্র আদো আদো কন্ঠে বাবা, বাবা বলে ডাকে ওকে সব সময় নিজের আশেপাশে খুঁজে। ওকে এ অবস্থায় দেখলে আমার আরো কান্না আসে। ও পুরোটাই যেনো রবিনের ডুপ্লিকেট ।
এভাবে দুইটা বছর চলে যায়, আমার বাবা-মাও আশেপাশে মানুষের কথা শুনে চাইছিলো আমাকে আবার বিয়ে দিতে। আমি রাজি হচ্ছিলাম না তখনি আমার জেঠাশ্বশুর, আমার বাবার কাছে উনার ছেলের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব রাখে। উনাদের ছেলেরও বিদেশ থেকে আসার সময় হয়েছে।
কিন্তু আমি কোন মতো চাইছিলাম না উনি উনার ছোট ভাইয়ের বউকে বিয়ে করুক। যেখানে তিনি আরো ভালো কাউকে পেতে পারে। কিন্তু আমার বাবা-মা এ বাড়ির সবাই ইমোশনাল কথাবার্তা বলে, রবিনের কথা বলে, আমার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বলে, বুঝিয়ে রাজি করায়।
তারপরও আমি আমার ভাসুরের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি, কিছু করা যায় কি-না।
কিন্তু উনার সাথেও কথা বলে বুঝলাম উনাকেও বাড়ির সবাই রাজি করিয়ে নিয়েছে।
উলটো আমাকে বুঝায় রিহা এ বাড়ির মেয়ে ও ওর নিজের বাড়িতে থাকতে পারবে।
তারপরও শেষ চেষ্টা করি রিহা থাকুক ওর বাড়িতে আমিও থাকবো তবে বিয়ে না করে।
উনি আমাকে বোঝান যে, আমাদের সমাজে একজন ডিভোর্সি, বিধবা মেয়ে একা থাকাটা খুব কষ্টকর। সমাজে মানুষ এদেরকে একা পেলে নানানরকম কথা রটান।সেখানে আমি যদি এভাবে বাচ্চা একটা মেয়েকে নিয়ে থাকি, তাহলে মানুষ আরও বিশ্রী কান্ড ঘটাবে।
সব দিক ভেবে, এই অল্প আয়োজনে আজকে বিয়েটা হচ্ছে। আমি বিয়ের আগে বা পরে উনাকে কখনো দেখিনি। আমাদের রিলেশনের আগে থেকেই উনি বিদেশে ছিলেন। আমি উনার সাথে সংসারটা কীভাবে শুরু করবো জানি না,। কীভাবে উনার সাথে মিশতে পারবো তাও জানি না। তবে আজকে থেকে উনাকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিতে হবে।
এ কয়েকদিনে উনি রিহার সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই রিহাকে শিখিয়ে দিয়েছে উনাকে বাবা ডাকার জন্য। মানুষটা রিহাকে অনেক স্নেহ করেন, সব সময় নিজের কাছে আগলে রাখেন। আমিও চাইছি মেয়েটা একটা সুস্থ পরিবেশ বড় হোক। কখনো ওর মনে না হয় ওর বাবা নেই। এ জন্য হলেও সংসারটা আমাকে করে যেতে হবে।
বিঃদ্রঃ এটা অনেকটা বাস্তব থেকে নেওয়া, এ লেখাটা এক পরিচিত আপুকে উদেশ্য করে লিখা। আপু প্রথম ভালোবাসার মানুষের সাথে না থাকতে পারলেও, এখন যেনো উনি অনেক ভালো থাকে,সুখে থাকে।
- সমাপ্ত -
লিখেছেন: জিনাত আফরোজ
.....................................................................................................................
বলতে পারেন গল্প সংগ্রহ করা আমাদের নেশা। আপনারা আপনাদের গল্প লিখে পাঠাতে পারেন। আমরা সকল লেখকদের সম্মান করি আর আমাদের সাইটের কোন গল্প নিয়ে কারো কোন অভিযোগ থাকলে অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
- CEO of KaziSilo
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন