সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, হাটতেই ভীষণ কষ্ট হয়,সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপে। আর এই শরীর নিয়েই ভিক্ষা করেন। দিনশেষে এই লোককে সিনা টান করে সাঁইসাঁই করে হেটে যেতে দেখেছি।
একদিন সকালবেলা নাস্তা করতে বের হয়েছি। গন্তব্য বঙ্গবাজার ফায়ার সার্ভিসের রাস্তা ধরে নাজিমুদ্দিন রোডের মাথায় গিয়ে দোকানে ছানা-মাঠা খাবো। কিছুদূরে যাওয়ার পরে মধ্যবয়সী দুইজন মহিলা একটি লাশ সামনে নিয়ে হাউমাউ করে কাদঁতেছে। তাদের এই স্বজনের মরদেহ দাফনের জন্য কিছু টাকার দরকার। আমি কারো লাশ দেখতে পারিনা, আমার ভেতরে ভীষণ অস্থির লাগে। কিছু টাকা তাদের দিয়ে মন খারাপ করে ফিরে গেলাম।
তারপর সন্ধ্যার দিকে নারায়নগঞ্জ যাবো। উৎসব বাসের টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি ঠিক এমন সময় দেখি ওই দুই মহিলা আবার সাহায্য চাইতেসেন। এবার তাদের বাবার নাকি অপারেশান। ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি!
কিছু মানুষকে মাঝেমধ্যে দেখা যায় রাস্তার উপর হয়ে হাত-পাঁ বাকা করে অথবা উপুত হয়ে অদ্ভুত ভঙিতে শুয়ে শুয়ে সাহায্য চাইতেছে। প্রথম দেখায় যেকোনো মানুষের কলিজা কেপে উঠবে তাদের এরকম পরিস্থিতি দেখে। বিশ্বাস করেন আর না করেন এই অদ্ভুত ভং ধরতে পারাটাই তার স্কিল।
এখানে যে যত অস্বাভাবিক ভং ধরতে পারে, তার আয়ও তত বেশি।
মুমুর্ষ রোগীর জন্য একটি রেয়ার গ্রুপের রক্তের পোস্ট দেখে একজন বললো আমার রক্তের গ্রুপ এটিই। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি যেখানে আছি সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল আসার মতো টাকা আমার কাছে নাই। রোগীর স্বজন'রা বললো আমরা খরচ দিচ্ছি আপনি চলে আসুন প্লিজ। বিকাশে টাকা নিয়ে নাম্বার'টি বন্ধ করে দিলো সেই চিটার। এদিকে রক্তের অভাবে রোগীর মরনদশা।
টাকার জন্য ঢাকার রাস্তায় তৃতীয় লিঙের মানুষেরা হাত তালি দিয়ে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, মানুষকে জিন্মি করে টাকা নিচ্ছিলো বাসের ভেতর। এমন সময় অন্য একগ্রুপ এসে তাদের নামিয়ে নিয়ে গেলো মারতে মারতে। পরে জানা গেলো তারা আসলে তৃতীয় লিঙের কেউ ছিলোনা, তারা সুস্থ স্বাভাবিক পুরুষ মানুষ!
সবশেষে যুক্ত হলো মরিয়ম মান্নানের 'আমার মা কোথায়'! তার গুছিয়ে কথা বলার স্কিলটা এতটাই ভালো যে কঠিন হৃদয়ের মানুষগুলিও তার প্রতিটি কথায় সহমর্মিতা জানিয়েছে। মায়ের লাশ পেয়েছি বলে তার কাব্যিক ফেসবুক পোস্ট দেখে সবার ভেতর কেপে উঠেছে। মানুষের প্রতি মানুষের যেটুকু মমত্ববোধ, আন্তরিকতা কিংবা সহমর্মিতা বাকী ছিলো তা এক মরিয়ম এসে সেইটুকুও মিসমার করে দিয়েছে।
তারপর বলেন, এতকিছু দেখার পর কেউ কাউকে কেন বিশ্বাস করবে? কেউ কাউকে কেনো সাহায্য করবে?
এই পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজটি হচ্ছে মানুষকে চেনা। মানুষকে কম চেনা যায়। বেশি চেনা যায়। কিন্তু পুরোপুরি তাকে চেনা যায় না।
আপনি যেদিন পুরোপুরি কাউকে চিনে যাবেন তখন বুঝতে পারবেন আগের চেনায় হয়ত আপনার ভুল ছিলো।
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সবাইকে।
by 𝑹𝒐𝒏𝒚 𝒁𝒂𝒎𝒂𝒏
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন