বরের সঙ্গে ঝগড়া করে বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে বসে আছি। কিন্তু আমার দৌড় এই ব্যাগপত্র গোছানো পর্যন্ত। কারণ আমার বাপের বাড়ি মাগুরা ,আর শ্বশুরবাড়ির আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নোয়াখালী। তাই এক দেশ থেকে অন্যদেশে যাওয়া তো সহজ কথা নয়। প্রতিবার যখন বরের সঙ্গে ঝগড়া হয় আমি পারি না অন্য মেয়েদের মতো বাবার বাড়ি গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে।
রাতে স্বামী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সুলতানা আমাকে তুমি কতগুলো ভালোবাস?
কি যে বলেন আপনি? আপনাকে পাবার জন্য আমার কুড়িটা বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আপনি কি মনে করছেন আমি আপনাকে কম ভালোবাসি? মোটেই না। আমি আপনাকে পাঙ্গাশ মাছের মত ভালোবাসি।
ছিঃ ছিঃ। ইয়াক থু থু। আমি তোমাকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের মতো ভালোবাসি। ইলিশ মাছ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই একটি জনপ্রিয় মাছ। আবার দাম ও অনেক বেশি।আর তুমি কি না একটি ময়লা আবর্জনা খাওয়া মাছের মত আমাকে ভালোবাস? এতোটিই ঠুনকো তোমার ভালোবাসা?
দেখেন একদম পাঙ্গাশ মাছ নিয়ে আজেবাজে কথা বলবেন না।সব মাছেই ময়লা আবর্জনা খায় আর নাম হয় পাঙ্গাশ মাছের। আমি একটি বিষয় বুঝতে পারি না পাঙ্গাশ থাকতে ইলিশ জাতীয় মাছ হয় কিভাবে? আসলে পাঙ্গাশ মাছ তো অনেক দামি আর সুস্বাদু মাছ,তাই সবার পেটে এই মাছ হজম হয় না।
তুমি ভুলে যেওনা আমি একজন শিক্ষক। তাই তোমার থেকে আমার জ্ঞান বেশি। তোমার থেকে আমার জানতে হবে না কোনটা ভালো মাছ আর কোনটা খারাপ মাছ।
এই নিয়ে এক কথায় দুই কথায় আমাদের ভেতরে তুমুল আকারে ঝগড়া লেগে গেল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বর বললো, যাওনা যাও তোমার বাপের বাড়ি গিয়ে মন ভরে পাঙ্গাশ মাছ খেয়ে আসো।
তারপর সকাল সকাল আমার ব্যাগপত্র গোছানো দেখে তিনি আমাকে ভেংচি দিয়ে স্কুলে চলে গেল।আর আমি বসে বসে চিন্তা করতে লাগলাম কিভাবে এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। আর যায় হোক পাঙ্গাশ মাছের অপমান আমি কিছুতেই বরদাস্ত করব না। আরে বেটা আপনি যদি শিক্ষক হন, আমি ও ছাত্রী। শিক্ষকদের থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বুদ্ধি বেশি, কারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা সৃষ্টি হয়েছে।
যেইভাবা সেই কাজ শুরু। তাড়াতাড়ি করে লেগে পরলাম রান্নার কাজে।৪ ঘন্টা ব্যয় করে বরের জন্য সরিষা ইলিশ,ইলিশ পোলাও, ইলিশ মাছ ভাজি,ইলিশ মাছের ঝোল, ইলিশের ডিমের বড়া, কুমড়া ও লাউপাতা দিয়ে ইলিশের ঘন্টো ,ইলিশের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, ইলিশের পাতুরি বড়া করলাম। রান্না শেষ করে গোসল করে হালকা সাজগোজ করে নিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল।
আসসালামুয়ালাইকুম হরানের সোয়ামি।আন্নেরে হানি দিব নি? ( পরাণের স্বামী, আপনাকে পানি দিব নাকি)
ওয়ালাইকুম আসসালাম। ওমা আজকে সূর্য মামা কোন দিক দিয়ে উঠেছে। বিয়ের চার বছরের মধ্যে তোমাকে হাজার বার বলে ও তোমার মুখে নোয়াখালী ভাষা শুনতে পেলাম না।আজ হঠাৎ কি মনে করে?
এডি কি কন আন্নে?আই অন্নের মতো নোয়াখাইল্লা রে ভালাবাসলাম আর আই নোয়াখাইল্লা ভাষা কইতে হাইরতুম নঅ? (এসব কি বলেন আপনি? আমি আপনার মতো নোয়াখালী কে ভালোবাসলাম আর আমি নোয়াখালী ভাষা বলতে পারব না)
সুলতানা কি রান্না করেছ আজকে?বাইরে থেকে ও দারুন ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।
আপনার পছন্দের সব রেসিপি করেছি।ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি খেতে আসুন।
সুলতানা তোমার হাতটি দাও দেখি।
কেন টাকা দিবেন?
আরে না তোমার রান্নার হাত দেখব। তুমি কোন হাত দিয়ে আজ এতো সুস্বাদু খাবার রান্না করলে?এতো সুস্বাদু খাবার আমি জীবনের প্রথমবার খেলাম।খুবই মজা হয়েছে।
এতোটা সুস্বাদু হওয়ায় কারণ আমি আজ সয়াবিন তেল ছাড়া রান্না করেছি।
কি বলো? তেল ছাড়া রান্না তারপরও এতো সুস্বাদু। আজকেই তোমাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিব। সেইখানে তুমি শিখাবে কিভাবে তেল ছাড়া সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়?
আজব তো। আমি কি একবার ও বলেছি যে আমি তেল ছাড়া রান্না করেছি? আমি বললাম যে সয়াবিন তেল ছাড়া রান্না করছি।
তাহলে কিসের তেল দিয়ে রান্না করলে যে এতো সুস্বাদু হলো?
আসলে আপনি তো কখন ও পাঙ্গাশ মাছ খান নি ,তাই আপনি জানেন ও না পাঙ্গাশ মাছের স্বাদ কেমন? একবার ভেবে দেখুন তো শুধু মাত্র পাঙ্গাশ মাছের তেল দিয়ে তরকারি রান্না করেছি তাই খেতে এতো সুস্বাদু হয়েছে তাহলে পাঙ্গাশ মাছটা খেতে ঠিক কতটা সুস্বাদু?
রাইটার: অপরাজিতা_রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন