শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

রম্য: সিনথিয়ার সাথে ফেসবুকে প্রেম

একটি মেয়ে আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। মেয়েদের রিকোয়েস্ট পেলে আমার খুব ভালো লাগে!  তারপর আমি দ্রুত মেয়েটির প্রোফাইলটি দেখলাম। আজকাল প্রোফাইল দেখে দেখে লিস্টে এড করি। জীবনে অনেক ধোকা খাইছি। মেয়ে মনে করে ফ্রেন্ড এড করি পরে দেখি দামড়া একটি পোলা!

তার প্রোফাইলে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করা রয়েছে। আর মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দরী! 

এড করার সাথে সাথে ইনবক্সে একটি এসএমএস আসল। "অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার কী যে ভালো লাগছে!  আপনি আমাকে এড করেছেন।"

মেসেজটির দিকে আমি অনেকটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকলাম। এমন একটা সুন্দরী মেয়ে আমার ফ্রেন্ড হয়ে এত খুশি! আমার নিজেকে সালমান খান মনে হচ্ছে। মেয়েটির নাম সিনথিয়া। বাড়ি খুলনায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মনে হয় হলে থাকে।

রাতে সিনথিয়ার এসএমএস, "ভাইয়া কেমন আছেন? "

"ভালো। আপনি?"

"খুব ভালো আছি। আপনার লেখা আমার কী যে ভালো লাগে! "

"ধন্যবাদ। "

আমি মনে হয় খুবই ভালো লিখি! এমন সুন্দরী একটি মেয়ে যার লেখার ভক্ত সে কী আর খারাপ লিখে? আমাদের আলাপ শুরু হলো। সিনথিয়াকে আমার পছন্দ হয়েছে!  এমন একটি আমার প্রেমে পড়বে ভাবা যায়!  অবশ্য মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে কি না সেটা জানি না!

সিনথিয়াই একদিন বলল, "একটি কথা বলি?"

"বলো।" আমরা এখন তুমি করে বলি।

"তোমাকে আমার খুব ভালো লাগছে! "

আমিই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম ছেলে যাকে এমন সুন্দরী একটা প্রথম প্রোপোজ করল! আঃ! কি আনন্দ!  বুকের ভেতর কেমন উত্তেজনা কাজ করছে।  আমি কী বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। 

"কী হলো কিছু বলছ না কেন! আমাকে তোমার পছন্দ না?"

"তোমাকে না পছন্দ করার মতো ছেলে আছে না-কি দুনিয়ায়?"

"তোমার কী গার্লফ্রেন্ড আছে?"

"আরে না।"

"আমার খুব ইচ্ছে একজন লেখকের সাথে প্রেম করব।"

এখন মনে হচ্ছে আমি হুমায়ূন আহমেদ।  আর সিনথিয়া হলো শাওন! অবশ্য আমার বয়স হুমায়ূন আহমেদের মতো এত বেশী হয়নি। সিনথিয়াও আমার অতটা ছোটো না।

আমাদের মাঝে প্রেম হয়ে গেল!  প্রেমে পড়লে এত ভালো লাগে আগে জানা ছিল না। তাহলে কবেই প্রেমে পড়তাম! কথাটি ঠিক হলো না। আমি অনেক মেয়ের প্রেমেই পড়েছি। মেয়েরা আমার প্রেমে পড়ে না! জীবনের প্রথম একটি মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছে! সিনথিয়ার সাথে ফেসবুকে প্রেম।

লেখালেখি করতেও ভালো লাগে না! সিনথিয়ার কথা ভাবতেই বেশি ভালো লাগে! আগে মনে হতো জীবনে সবকিছু ছাড়তে পারলেও লেখালেখি আমি ছাড়তে পারব না। এখন মনে সিনথিয়ার জন্য সব ছাড়তে পারি!

আমাদের এখনো দেখা হয়নি। সিনথিয়া থাকে কুমিল্লা আর আমি সিলেট!  আমরা কোথায় হানিমুনে যাব। আমাদের কয়টি বাচ্চা নিবো। বাচ্চার নাম কী হবে সব ঠিক করা হয়ে গেছে! বাচ্চা কোন ইউভার্সিটিতে পড়বে?

আমি বললাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। 

"না না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।'

এ নিয়ে আমাদের মাঝে কঠিন ঝগড়া হলো। সিনথিয়া কিছুতেই তার ছেলেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে না। ও সিনথিয়ার ইচ্ছে ওর প্রথম সন্তান ছেলে হবে। আমার অবশ্য মেয়ে নেয়ার ইচ্ছা। সমাধান করার জন্য আমি বললাম,  "আচ্ছা টস করি।"

আমার কথা শুনে সিনথিয়া আর রেগে গেল। "আমার ছেলে নিয়ে জুয়া খেলবা তুমি! "

আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেল! আমার মতো এমন খারাপ বাপের সাথে সিনথিয়া সম্পর্ক রাগবে না! আমাকে ব্লক করে দিছে! আসল ঘটনা জানছি পরে। সিনথিয়ার ইচ্ছে ওর এক্স লিস্টে সব ধরনের ছেলে থাকবে! ইন্জিনিয়ার, ডাক্তার সব লিস্টে ছিলো। লেখক ছিলো না! 

সিনথিয়া এখন প্রেম করছে একজন বিদেশি গায়কের সাথে। গায়কটি খুব নাম করা না। খুব নাম করা গায়ক তো সিনথিয়ার সাথে প্রেম করবে না তা-ই না? আমি এটি জানলাম কী করে! গায়কের আইডিটি যে আমার সেটি সিনথিয়া জানে না! আর ওর ইতিহাস জানলাম সিনথিয়ার রুমমেট সুমাইয়ার কাছে। সুমাইয়া আবার প্রেম করে আমার ওবায়দুল নামের আইডির সাথে!


- লেখক: ফারজানা গাজি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন