রিয়াজরা গ্রামে থাকে। তাদের বাড়ির পাশে একটি বেশ বড়সড় মাঠ রয়েছে। স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেই মাঠে ক্রিকেট খেলতে যায়। কিন্তু সেই মাঠ থেকে খানিকটা দুরে একটি কবরস্থান আছে। সেখানকার লোকদের মতে, ওই কবরস্থানটি অভিশপ্ত। সে কবরস্থানে নাকি ভূত প্রেতের আড্ডাখানা। কিন্তু রিয়াজ আর ওর বন্ধুদের এইসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ওরা স্কুল ছুটি হলেই সেই মাঠে খেলতে যায়। আর শুক্রবার কিংবা কোন ছুটির দিন হলে তো কথাই নেই। সারাদিন তারা সেদিন মাঠে ক্রিকেট খেলে। এখন বিকাল। ওরা সবাই এখন মাঠে ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে রয়েছে।
রিয়াজের মনটা খারাপ। কারন, রিয়াজ আর এখানে থাকবে না। তার বাবা তাকে শহরের ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করাবে। রিয়াজের এই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু ওর বাবা মুখের উপর না বলার কোন সাহস নেই। রিয়াজের বাবা ভিষণ রাশভারি লোক। বাড়ির সবাই তাকে যমের মতো ভয় করে।
মুরাদ রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি যাবি না বলেছিস নাকি যাবি বলেছিস?
রিয়াজ, না গিয়ে কি আর উপায় আছে। তুই তো জানিস যে আমার বাবা কি গম্ভীর মানুষ। যদি না বলতে যাই তাহলে ভিষণ মারবে।
মুরাদ, হুম। তাহলে কি আর করা। চল শুরু করি।
রিয়াজ, তাহসান........
তাহসান, বল কি বলবি?
রিয়াজ, বল এনেছিস তো?
তাহসান, হ্যা এইযে এনেছি তো।
রিয়াজ, তাহলে চল খেলা শুরু করি। আজকের পর তো আর একসাথে আমরা খেলতে পারবো না।
মান্না, তাহলে আমি আর তাহসান আগে নামবো। আমরা ব্যাটিং করবো।
মুরাদ,উহু সেটি হচ্ছে না। আমরা আগে ব্যাটিং করবো।
মুরাদ,না আমরা।
মান্না,না আমরা।
মুরাদ,বলছি তো আমরা।
মান্না, জিন্দিগিতেও না। আমরাই আগে ব্যাটিং করবো।
মুরাদ,ভালো হচ্ছে না কিন্তু মান্না। তুই প্রত্যেকটি দিন এমন করিস।
মান্না, ও এখন আমার দোষ। আর নিজে। নিজে কি ধোয়া তুলসীপাতা।সেদিন ব্যাটিং নিজে ব্যাটিং করে। আমাদের তো ব্যাটিং করার সুযোগ দিলেন না।
মুরাদ,সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গেছিল তাই।
রিয়াজ, ওহো তোরা থামবি ? খেলতে এসে এসব কি শুরু করেছিস ?কথা না বাড়িয়ে খেলা শুরু কর।
মান্না, আমরা তাহলে আগে ব্যাটিং করবো।
মুরাদ,না আমরা।
রিয়াজ,টস হবে। টসে যে জিতবে সেই ব্যাটিং করবে।
মান্না, ওকে আমার আপত্তি নেই।
মুরাদ,আমারও আপত্তি নেই।
রিয়াজ,তাহলে টস শুরু করি।
রিয়াজ পকেট থেকে এক টাকার একটি কয়েন বের আকাশে ছুড়ে দিল।টসে মান্নারা জিতল। মান্নারা ব্যাটিংয়ে নামল। রিয়াজরা বোলিং করতে নামল।
মান্না ভালোই ব্যাট করছিল। গন্ডগোলটি শুরু হয় মান্না আউট হওয়ার পর। মান্নার পর ব্যাটিংয়ে নামে তাহসান। প্রথম প্রথম ভালোই খেলেছিল।কিন্তু শেষ ওভারের দিকে মুরাদের বলে জোরেশোরে একটি ছক্কা হাঁকালো।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বল গিয়ে সোজা ওই কবরস্থানের মধ্যে গিয়ে পড়ে।
তাহসান, এই রে এবার কি হবে ?
মুরাদ, কি আর হবে। তুই গিয়ে বলটি আনবি।
তাহসান, না ভাই আমি পারবো না।
মুরাদ,কেন তোমরা তখন ড্যাং ড্যাং করে খেলতে গেলে কেন ? এখন যাও ঠেলা সামলাও।
রিয়াজ,আহ্ মুরাদ কি শুরু করলি তুই ? আমরা এখন একটি সমস্যায় পড়েছি।আর সে সমস্যার সমাধান আমাদেরকেই করতে হবে। মান্না.....
মান্না, বল।
রিয়াজ, তুই যাবি ? তোর তো খুব সাহস।
মান্না,না রে আমি যেতে পারবো না। মা জানতে পারলে খুব মারবে।
রিয়াজ, মুরাদ.......
মুরাদ, নারে। আমার ওখানে যেতে খুব ভয় করে।
রিয়াজ,তাহলে আর কি আমিই যাই।
মুরাদ, সেকি রে ? তোর ভয় ডর নেই নাকি ?
রিয়াজ, এতো ভয় পেলে চলে নাকি। আমি যাচ্ছি। তোরা গেলে আয়।
বলে রিয়াজ ওই কবরস্থানের গেইট খুলে ভিতরে প্রবেশ করল। ওর চোখে সামনে একটি দোতলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে শুধুই কবর। বাড়িটি তালা দেয়া। যাহোক, রিয়াজ কবরের আশপাশেই ভালো করে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। তা ও বুঝতেও পারলো না। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ভুলবশত একটি কবরের উপর বসে পড়লো।ঠিক তখনই ও দেখল যে ওর পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটির গায়ে সাদা কাপড় পড়া।চোখ দুটো লাল টকটকে। মেয়েটি চোখ রাঙিয়ে রিয়াজের দিকে তাকাল। হঠাৎ মেয়েটি রিয়াজের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। মেয়েটিকে দেখে রিয়াজ ভিষণ ভয় পেয়ে গেল। সে উঠে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার পা যেন কয়েকমণ ভারি হয়ে গেল। তারপরেও ও চেষ্টা চালিয়ে গেল। অনেক কষ্টে দৌড়ে গেইটের কাছে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখল মেয়েটি ওর পিছু পিছু আসছে। এটি দেখে সে আরো জোরে দৌড় দিল। এক দৌড়ে মাঠের ভিতর ওদের কাছে এসে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো। ওরা দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরলো।ওরা ওর মুখে জল ছিটালো। কিছুক্ষণ পর ওর জ্ঞান ফিরল। ও একটু উঠে এদিক সেদিক তাকাল। কিন্তু ওই মেয়েটিকে আর দেখতে পেল না।
মুরাদ,কিরে? তুই এদিক ওদিক কি দেখছিস ?
রিয়াজ, আমি ওই মেয়েটিকে খুঁজছি।
মুরাদ, কি উল্টাপাল্টা বলছিস ? এখানে কোন মেয়ে নেই। এখানে শুধু তুই,আমি, মান্না আর তাহসান আছে। আর তো কেউ নেই।
মান্না, এখন চলো বাড়িতে চল। রাত তো হয়ে আসছে।
তাহসান, ঠিক বলছিস। চল। কাছাকাছি কোন একটি বাড়িতে গিয়ে রাতটি কাটাই। তারপর সকালেই হলে না হয় বাড়ি যাব।
ওরা সেখান থেকে চলে গেল। মাঠ থেকে বেরিয়ে একটু দুরে একটি বাড়িতে রাত কাটাতে গেল।
সৌভাগ্যক্রমে, বাড়ির মালিক রিয়াজের বাবাকে চেনে। আর ওর বাবার সাথে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
যাইহোক, বাড়ির মালিককে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল রিয়াজ।
বাড়ির মালিক জনি ভাই রিয়াজকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার ভাগ্য ভালো তুমি ওই মেয়েটির হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছো।অনেক বছর আগে ওই কবরস্থানে একটি পরিবার বাস করত। তখন ওখানে কবরস্থান ছিল না। কিন্তু ঘটনার সূত্রপাত হয় তখন যখন ওই বাড়ির মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।কেন ? কিভাবে মারা যায় তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু মেয়েটি মারা যাবার পর ওই বাড়ি সহ পুরো জায়গাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই জায়গায় কেউ থাকতে চায় না। শেষমেশ সেই জায়গায় কবরস্থান করা হলো।কিন্তু কবরস্থান করলেও মেয়েটির আত্মা প্রতি রাতে সেই কবরস্থানে ঘুরে বেড়ায়। যে ওই কবরস্থানে যায়। সে আর ফিরে আসে না। তার মৃতদেহ ঠিক তার পরদিন সকালে পাওয়া যায়।
তারপর সেই বাড়িওয়ালা জনি ভাই রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললেন, একমাত্র তুমিই ওই বাড়িটি থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছো।
তার পরের দিন ওরা বাড়ি ফিরে যায়। রিয়াজের বাবা রিয়াজকে অনেক বকা দেয়। বিকালে রিয়াজের বাবা রিয়াজকে শহরে নিয়ে যায়। কিন্তু সেদিনের ঘটনা আজও রিয়াজের মনে পড়ে। আর যখনই মনে পড়ে তখনি ওর গায়ের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন