আমি যে খাটে শুয়ে থাকি, বেলা-অবেলায় ঘুমোই, এই খাটটা আমার দাদীর। খাটের বিশেষত্ব আছে বেশ! এই যেমন, বড় আপার আমার উপর বেশ ক্ষোভ। চাকরী-বাকরী নেই, ছিলোওনা। টাকা কামানোর অতীত রেকর্ড ঘাটলে দু'একখানা টিউশন বাবে আরকিছুই খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
আপাতত,
দিন দুপুরে ঘুম ভাঙে, অলসতা দলবল নিয়ে আসে৷
তারপর খাটে একটু বেশি গড়াগড়ি করি। আপা বুঝতে পারে আমার ঘুম ভেঙেছে।"
সুমনা তার ছোট ছোট মোলায়েম হাত দু'টো দিয়ে একটি সিলভারের গ্লাসে আমার জন্য পানি আনে।
সপ্তাহের ৫দিন মতো সকালের নাস্তাটা আমি পানিতেই সেরে ফেলি।
সুমনা খুব মিষ্টি মেয়ে। বড় আপার মেয়ে। আপার "সুমন"নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছে "সুমনা"৷
সুমন নামে আমার এক বন্ধু ছিল। স্বভাবে ভীষণ রোমিও। হালকা শ্যামলা চেহারা ছিল। রোমিওদের প্রেমিকার অভাব থাকে না। আমার কাজ ছিল, নিয়ম করে উনাদের ভাবী ডাকা।
আমি আপাকে সুমনের গল্প শোনাতাম৷ আপা প্রথমে হাসতো, পরে রেগে যেতো!
এমন খুঁনসুটি খেলা হয়না বহুদিন আপার সাথে।
সুমনা আমার মাথার কাঁচাপাকা চুল তোলে৷ একটা চুল ১টাকা!
সে প্রতিদিন হিসাব রাখে কতোটা তুলেছে।
বেশ পাওনাদার হয়েছে৷ পকেট ফাঁকা, সে জানে!
তার ইচ্ছা আমার বিয়ের পর মামীর কাছ থেকে সব টাকা নিবে।
অবশ্য ছোটবেলায় ছোট চাচা আমাকে বেশ ঠকিয়েছে এসব বলে কয়ে! আমি ঠকবাজ নই।
অল্পবয়সে আমার পাঁকা চুল নিয়ে বেশ খানিকটা চিন্তা ছিল আম্মার!
আমার বন্ধুরও! আমি যাকে পড়াতাম, সেই মেয়েটিরও!
শুধু আমার ছিল না, নেই৷ এই যুগে অমন দু'চারটা চুল সাদা না হলে এতো বাহারী লেভেলের তেলের ব্যবসায়ীরা কই যাবে!
আম্মা অবশ্য ওপারে গিয়ে চিন্তামুক্ত হয়েছে!
আমার স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীর কলেজে উঠতেই বিয়ের পাঠ চুকিয়েছে৷
আর বন্ধু!
সংসারের অশান্তিতে তাঁর নিজের চুলই "রেষ্ট ইন পিস!"
আর আমার সাদা চুল তুলে সুমনা খানিকটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। আমি দরজায় তাকালাম৷ আপাকে দেখছিনা!
অদ্ভুত লাগলো৷
মাসের ৩০টা দিন ধরে বছরে ৩৬৫-৬৬দিনই আমার অবেলার ঘুম ভাঙার পর আপা রান্নাঘর থেকে এসে বলবে
"নেশা করিস নাকি? কোন মেয়ের সাথে টাংকি মারিস রাতে? এই তোর চোঁয়ালের একি হাল?"
আপার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হবে, অনন্ত মহাকালে হারিয়ে যাওয়ার পর সে আমাকে খুঁজে পেয়েছে৷"
আমার ভীষণ হাসি আসে। আমি চেপে রাখি। আপার কথার জবাব দেই না৷"
আব্বার রুমে উঁকি দিলাম৷ ৪বছর যাবৎ প্যারালাইজড পা৷
আমার দিকে তাকান না৷ না তাকানোর কারণ যথেষ্ঠ! উনি মেকি রাগ দেখান৷
আড়ালে আবড়ালে যে, আমার ছোটবেলার ছবিটা বুকপকেট থেকে বের করে হাত বোলান! সে তথ্য আমার জানা৷
আপা,আব্বা মোটামুটি মেকি রাগ দেখিয়েই আমাকে ভালোবাসেন৷ আমিও কাটখোট্টা রকমের হয়ে গিয়েছি৷ জোর করে ভালোবাসা নিতে চাই না, শুধু সুমনা বাদে৷ যদিও সে প্রকাশ্যেই তার মামাকে বেশ ভালোবাসে৷"
রান্নাঘরের দরজার চৌকাটে হেলান দিতেই চমকালাম!
ঘুমাতুর চোখ কচলে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকাই! আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে৷ কতকাল পর আমার বুকে এমন চিনচিন অনুভূতির জন্ম হয়েছে! আহ!
আমি নিজেকে সামলে নিলাম খানিক৷ গলাটা শক্ত করে নিলাম৷
মৃদ্যু হেসে নরম গলায় মিতুকে বললাম,
আহা! তুমি যে? কবে এলে? কতদিন পর!"
এমন স্বাভাবিকতা দেখে আপা খানিকটা চমকে গিয়েছে আমি বেশ বুঝলাম৷ মনে মনে আমিও চমকেছি৷"
মিতু হয়েছে অপ্রস্তুত৷
তার অর্ধযুগের পুরনো পসেসিভ প্রেমিকের এমন ভাবভঙ্গি সে মেনে নিতে পারছেনা! তা আমি নিশ্চিত!"
মিতু অপ্রস্তুত হাসে৷ একদম প্রথম দিনের মতো৷"
বন্ধুদের প্রেমের ঘটকালি করা আমি, একদিন মিতুকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে বসলাম৷
সেদিনও মিতু এমন হেসেছিল৷ কপাল কুঁচকে বললো, সত্যি তো!
অতি,অল্প সহজেই আমাদের প্রেম হয়ে গেল৷
আমি প্রেম বসন্তের কবি হলাম৷ অখাদ্য,কুখাদ্য লিখতাম!
মিতু মুগ্ধ হতো৷"
অপ্রস্তুত মিতুকে আমি যথেষ্ট বুঝদার হয়েছি বোঝাতে আবার প্রশ্ন ছুড়লাম,
তোমার প্রেমিক কেমন আছে?"
এই উত্তর শোনার আগে অবশ্য আমার বুকের ভেতর ধলা পাকিয়ে আসছে, বুকের চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে৷ ভাবছি এই যাত্রায় কেউ এসে বাঁচিয়ে দিক৷ পুরনো প্রেমিকার মুখে পসেসিভ "পুরনো"প্রেমিক হিসেবে আমি এই উত্তর শুনতে চাই না৷
পালাবার পথ নেই৷ আপাকে দেখলাম উৎসুক চোখে নাটকের দৃশ্যের মতো তাকিয়ে আছে৷"
ফোনটা বেজে উঠলো৷ আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম৷
সিম কোম্পানীর কল এ আমি এই প্রথম সন্তুষ্ট হলাম৷"
আমি হাত উচিয়ে মিতুকে থামালাম৷ যদিও সে চুপ,থেমেই আছে৷
ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বললাম"দুলাভাই শাফায়েত" ফোন দিয়েছে৷
যেতে হবে!
খেয়ে যেও! আপার বিরিয়ানীটা এখনো দারুণ৷"
আপার উৎসুক চোখ,কমল মুখ আবারো শক্ত রূপ ধরছে৷
আমি দৌঁড়ালাম৷"
শাফায়েত ভাইয়ের আপাতত নির্বাসন চলছে বন্ধুর মেসে৷ আপার সাথে বেশ রাগারাগি হয়েছে৷
সারাটা বছর তাদের এই রাগ-রাগ খেলা চলে৷ আমি কখনো দর্শক! কখনো রেফারির ভূমিকায়!
আপার হয়েই পক্ষপাতিত্ব করি! নয়তো আমারো দু'বেলা খাওয়া বন্ধ!"
ঝগড়া পরবর্তী উনারা ক'দিন আলাদা থাকেন৷ এই থিওরি অবশ্যই আমার৷"
বেলা ৩টা৷ করিম চাচার ফুচকার দোকানের সামনের বেন্ঞ্চিতে পায়ের উপর পা তুলে হা করে বসে আছি৷ ফোন বাজছে বেশ কিছুক্ষণ৷
আমি অনুমান করি, আপার ৮-১০কল,শাফায়েত ভাইয়ের ৬-৭টা মতো হবে৷
করিম চাচা বিড়িতে লম্বা টান দেয়৷ খুক খুক করে কেশে বলে, ভাতের টাইমে এসব খাইয়া হা করে আছো ক্যান? এই ভরদুপুরে প্রেমিকারে মনে পড়লো নেকি?"
এই লোক জানে, আমার মিতুকে বেশ মনে পড়লে এখানে আসি৷ ভীষণরকমের ঝাল ছিটানো ফুচকা গিলে হা করে বসে থাকি৷
বিড়ি-সিগারেট আমাকে টানেনা৷"
আমি রসিকতা টেনে বললাম,
-এই ভরদুপুরে বিবিকে জড়িয়ে ভাতঘুম না দিয়ে তুমি কি করো?"
বুড়ো জবাব দেয়না৷ হাসে!"
বেলা পেরোয়, ফোনে মিসডকলের সংখ্যা বাড়িয়ে আপা,শাফায়েত ভাই ও ক্লান্ত হয়েছে বোধয়৷
আমার কানে মিতুর রিনরিনে গলার গান বাজে, প্রেমময় কবিতা আমার বুকে মিছে আবেগের ঢেউ তুলে৷ ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত লাগে৷
আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াই, ঘরে ফেরার দূরের রাস্তায় হাঁটা ধরি৷
রাস্তার পাশ ধরে হাঁটি৷ বড় একটা বাস যাত্রী ছাউনির সামনে দাঁড়ানো৷ আমি মুচড়ি হেসে মানিব্যাগ হাঁতড়ে পুরনো টিকিট জোড়া বের করি৷
মিতুর কথা ভাবতেই ঘরে ফেরার অনিহা জাগে৷
বেশি আলোর একটা ল্যাম্পপোষ্টের নিচে সন্ধ্যারাতটা কাটিয়ে দিবো ভাবলাম৷"
সেবার মিতুর বিয়ের কথাবার্তা বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে৷ মিতু ভয়ে জবুতবু হয়ে বহুকষ্টে আমাকে পাত্রপক্ষের বিবরণ শোনায়!
আমি কষ্ট চেপে মুখে হাসি ঝুলোই, নিজেকে আটকাই!
একটু পরেই মেয়েটা হাউমাউ করে কান্না জুড়ে আমার বুক ভাসিয়ে দিতো!
আমি তার চুলে বিলি কেটে শান্তনা দেই!
রিনরিনে গলার সদা চন্ঞ্চল, রূপবতী,গুণবতী প্রেমিকার কান্না আমার কিছুতেই সহ্য হবার নয়৷ আমি বিদ্রোহী হলাম৷
বেশ ক'দিন ভীষণ সিরিয়াস হলাম৷ একটা চাকরী চাইই!
হলোনা! কপাল!
তবুও মিতুর সাথে এমন একটা গম্ভীর বিকেলে, চেনা পরিচিতি ছাড়িয়ে অনেক দূরে ছোট্ট একটা বসত গড়ার লোভ সামলাতে পারিনি!
বাসের টিকিট কেটে, মিতুর দেয়া পান্জাবী পড়ে দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তার এককোণে!
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার ১ম,২য়,৩য় প্রহর শেষে রাত নেমেছিলো সেদিন৷ মিতু আসেনি!
আমি?
আমিও বহুদিন ঘরে ফিরিনি, ইচ্ছা হয়নি আমার৷
ভাবলাম, নিঃস্ব হওয়ার চেয়ে নীড়হারা হই!
কোথায় মনে বেদনা ভর করবে, ব্যাটা ভর করেছে এডভেন্ঞ্চার!
দিনকয়েক মিতুর স্বাক্ষাৎ, আপার আদর আর আব্বার রাগী না চেহারা না দেখে আমার ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠে৷
মিতুর নাম্বারে আর ডায়াল করিনা! আমার অভিমান জমেছে বেশ৷ সেবার আমি প্রথমবারের মতো অভিমানী হলাম৷
কাঁপা গলায় আপাকে ফোন দেই৷ আমি কান্না আটকাতে পারিনা৷
আমার সহজ-সরল মোলায়েম আপাটা আমাকে শক্ত গলায় আমাকে না চেনার ভান করে বসলো৷
আমার সন্ধ্যাগুলো বিচ্ছিরে থেকে বিভৎস! রঙিন জীবনটা হুট করে রংহীন ধূসর-ফ্যাকাশে হলো!
বিজলি চমকানো বর্ষার আকাশের নিচে আমি হাত মেলে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জলে চোখে পানি লুকানোর শুরু!
আমি ঝুম বৃষ্টিতে হাতমেলে, চোখবুজে ভাবি, একটা বিজলি চমকে উঠুক! আমার মনের আবেগ-অনুভূতি, অসহায়ত্ব,কান্না ঝলসে ছাই হয়ে উড়ে যাক।"
আমার তখন করুণ অবস্থা৷ মুখ ফুটে কথা বলতে পারিনা, গলা আটকে আসে৷ দাঁতে দাঁত চেপে কত বিকাল ভালোবাসা না পেয়ে কাঁটিয়ে দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই!"
মুখভর্তি দাঁড়ি আর ভাঙা চোয়াল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম নিজেকে চেনা যাচ্ছেনা৷
আমি অনুভব করি, আমার আর কষ্ট লাগেনা৷
আমি বিরক্ত হলাম!
ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবে আমার কষ্ট পাওয়া উচিত৷ বেদনায় নীল হয়ে থাকা উচিত৷"
আমি ঠিক করলাম মিতুদের এলাকায় ফিরবো৷ শেষবিকেলে বিরামহীন ঘুরবো৷
আচ্ছা মিতুর সাথে যদি দেখা হয়! কেমন হবে!
আমি আবার কষ্ট পাবো!"
আমি রাস্তার পাশ ধরে হাঁটি৷ ছেলেপুলেদের ফুটবল খেলা দেখি মাঠে৷ রিকশার হুডির নিচে ছুটেচলা প্যাসেন্জারদের দেখি৷
কপোত-কপোতীদের হাসি মুখ দেখে সুখ-দুঃখ-বেদনার জগতের সবকিছুই অনুভব হয় আমার৷"
আমার কষ্টের পরিমাণ একদিন ধুপ করে বেড়ে গেলো৷ সেদিন বিকেলের বদলে ঠিক দুপুরে বেরোলাম৷
মিতু কে দেখে ফেলেছি!
আগের চেয়ে হালকা শুকিয়েছে৷ বেশ রূপবতী লাগছে৷
আমার হিংসে হলো, মিতুর পাশ ধরে হেঁটে চলা ছেলেটাকে দেখে৷
পাত্রের বিবরণ অনুযায়ী আমি মেলালাম৷ হ্যান্ডসাম ছেলেটাই সম্ভবত মিতুর স্বামী৷
মিতুকে দেখতে আসা সব পাত্রের বিবরণ আমি খুব যত্নে সংরক্ষণ করেছিলাম৷"
আমায় কষ্টের নেশা পেয়ে বসলো৷ আমি লুকিয়ে মিতুকে দেখি প্রতিবিকেলে৷
অবশ্য লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই৷ চেহারা সুরৎ এর অবস্থা আর মুখভর্তি দাঁড়িতে আমার বেশ ক'জন কাছের বন্ধুই আমাকে চেনেনি৷"
আমার কষ্টের নেশার ঘোর কাটলো আমার সুমনা আমার দু'চারটা অভিমানী চড় খেয়ে৷ সেদিন বাজারে কিভাবে যে চিনে ফেলেছিলো আপা!
ধরা খেয়ে আমার বেশ আফসোস হয়েছিলো৷
আপার খুশিমুখ আর সুমনার কোমল হাতের ছোঁয়া আমার বুকের মাঝখানে আটকানো কষ্ট-অভিমানের পাথরটা গলিয়ে ফেলেছে অল্প ক'দিনেই৷"
রাত বাড়ছে৷
রাস্তার পাশে আর বসার ঝোঁ নেই৷ ল্যাম্পপোষ্টের ধারে কাছে বাস করা মশাদের দয়া মায়া নেই, নয়তো তারা আমার মতো একা কাউকে নিতে পারছেনা৷
ব্যাটারা ধরেই নিয়েছে, এখানে যুগল ব্যতীত বসা অপরাধ৷"
আমি ধীরলয়ে হাঁটা ধরি৷ মোড়ের দোকানীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চললাম৷ বাকী জমেছে বেশ৷ সবই শেষবিকেলের বাকি!
ধরা পড়ে গেলে,
সামনের মাসে চাকরি হলে পুষিয়ে দেবো বলছি প্রতিমাসেই!
সাবধানে দরজা খুললাম৷ আপার বানানো বিরিয়ানীর সুঘ্রাণে আমি পাগল হওয়ার জো৷ এই সুঘ্রাণ আমার দুঃখ-কষ্ট না পাওয়া সব ভুলিয়ে দেয়৷
ভাতের টেবিলে আব্বা-আপার হাসিমুখ দেখে আমার ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠে৷
সুমনাকে দেখলাম মিতুর কোলঘেষে খোশমেজাজে আছে৷
আমি চোখ ঘুরিয়ে মিতুকে একবার দেখে নিই৷ চোখ দু'টো হালকা ফোলা! সরুনাকটা হালকা লালচে লাগছে এই led র আলোতেও!
আমার আবার পুরনো পসেসিভ প্রেমিক হওয়ার শখ জাগে!
মিতুর পাশ ঘেষে হাঁটা সেদিনের নায়কোচিত ছেলেটার কথা মনে পড়তেই চুপষে গেলাম৷
ভাবলাম, ইশ! কেন যে আসলেনা মেয়ে! কষ্ট হলো আমার৷ ভীষণরকমের কষ্ট৷
আমি লম্বা শ্বাস নেই৷ না পাওয়ার দীর্ঘঃশ্বাস!
রুমের দরজাটা লাগাতেও গিয়েও লাগালাম না৷ আমার সব আমার অসহ্য লাগছে৷ ভেতরটা হু হু করে উঠে৷"
ইচ্ছে হলো, কিশোর প্রেমিকদের মতো মুখে বালিশ চেপে কাঁদি!
আমার এক ছোটভাই এমনেই কাঁদতো৷"
মিনিটখানেক বাদে রুমের লাইট জ্বলে উঠে৷ অসহ্য লাইট!"
ধীরপায়ে মিতু পাশে এসে বসে৷ আমি হালকা পাশ কাটিয়ে সরে বসি৷
মিতু হাতে হাত রাখতেই আমি চমকে উঠি৷ হাত সরালাম না৷"
নিস্তব্ধতা ভেঙে বললাম,
-এই অবেলায় হাজির হলে হঠাৎ?"
মিতু মিনমিন করে বলল,
-শ্বশুর আব্বার আদেশ!
বেসময়ে রসিকতা আমার পছন্দ হলোনা৷ নিশ্চুপী রয়ে সয়ে প্রতিবাদ জানালাম এহেন রসিকতার!"
মিতু গলাঝেড়ে বলল,
আমি ভবঘুরে প্রেমিকের ভবঘুরে প্রেমিকা হয়ে, বাস ধরে পালালে আমার পোষাতোনা৷
ছাপোষা আমিটা সেদিন বাস স্টেশনের বদলে তোমার আব্বার রাগী-গম্ভীর মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম৷
ভদ্রলোক সেদিন আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিল, ভবঘুরে প্রেমিক পালতে পারা সহজ, ভবঘুরে স্বামীর ঘর করা অতোটা সহজ নয়!
আপা আমার কপালে চুমু দিয়ে যে বলল,
কাঁদিস না মেয়ে! ছাগলটার চাকরি হলেই তোরে তুলে এনে বৌ বানায় দিবো!"
আমার ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠে৷
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম,
এই যে তোমার পসেসিভ প্রেমিক, এতগুলো বিষণ্ণ বিকেল,বিভৎস সন্ধ্যা আর সীমাহীন কষ্ট আর ভাঙা চাপা নিয়ে তরুণীদের সন্দেহের দৃষ্টির কারণ হয়েছি! এর দায় কে নিবে?
মোড়ের দোকানের বাকির লম্বা লিষ্ট!
চাকরির ঠিক নেই৷
ভবঘুরে না হলেও বেকারতো রয়েছিই!
এখনো দুঃসময় কাটেনি৷ অসময়ে হাজির হলে আবার!"
৩মাসের ১০ তারিখে তোমার পাশ ঘেষে হাঁটা ছেলেটা কই?
এত হাসাহাসি কিসের হয়েছিল তাঁর সাথে?"
মিতু ভ্রু কুচকে মিনমিন করে বলল,
প্রেমিকার দেয়া পান্জাবি গায়ে ঝুলিয়ে প্রেমিকার পেছনে গোয়েন্দাগিরী?
প্রেমিকাদের যে ২-৪খানা এক্সট্রা চোখ থাকে!
বুঝোইতো!
তোমাকে দেখেই হেসেছি৷
অলসতা ঝেড়ে মানুষ হও৷ পরশু পাত্রের বিয়ে!"
সব শংকা কাটিয়ে আমার ভেতরটা উৎফুল্লতায় ভরে উঠে৷
-আমাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরা উচিত নয়?"
মিতুল বলল৷
আমি একগাল হেসে মিতুকে জড়িয়ে ধরি৷
মিতু ফিসফিস করে বলল,
-ভোরে উঠে পান্তাভাত গিলে ভাঙা চাপা ভরাতে হবে৷ সফল-সংগ্রামী প্রেমিকদের ভাঙা চাপা থাকতে নেই৷ সফল মানেই হস্টপুষ্ট!
by ইমতিয়াজ আহম্মেদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন