মধ্যদুপুর। কলেজ থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছি। বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সামনে থেকে বেশ কিছু মেয়ে বাসে উঠে পড়ল। তার মধ্য থেকে একটি গোলাপি পোষাকে আবরিত মেয়ে আমার পাশে বসলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। আর আমি জানালার বাইরে উজ্জ্বল শহর দেখছি। সূর্যের উত্তপ্ত কিরণ আমাদের চোখেমুখে এসে পড়ছে। ঢাকা মেডিকেলের স্টপ থেকে আরো যাত্রী বাসে উঠলো।
বাবা-মার সাথে উঠে ছোট্ট একটা মেয়ে। ফুলের মতো সুন্দর তার হাসি। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। গোলাপি মেয়েটা ছোট্ট মেয়েটাকে তার কাছে টেনে নিলো। কোলে রাখা ব্যাগটা আমাদের দুজনের মাঝে রেখে ছোট্ট মেয়েটাকে সে কোলে রাখলো। কিন্তু ব্যাগটা বেশ কিছু জায়গা নেওয়ায় গোলাপি মেয়েটার বসতে একটু কষ্ট হলো। আমি ব্যাগটা আমার কাছে নিয়ে আরও একটু চেপে বসলাম যেন মেয়েটা ঠিকঠাক সেখানে বসতে পারে।
সুন্দরী গোলাপি মেয়েটা তার কোমল কন্ঠে হাসিমাখা ঠোঁটে বললো,
- "থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া!!"
শব্দগুলি আমার অন্তরে শান্তি ছুয়ে দিলো। মনে হয় শব্দগুলির ভেতরে কিছুটা মায়া ও লুকায়িত ভালোবাসা রয়েছে। অদ্ভুত এক ধরনের আনন্দ। তার কন্ঠস্বরটা অপূর্ব সুন্দর। এরকম সুন্দর কন্ঠ আমার কান আগে কখনো শুনেনি। আমার কানে বাজতে লাগলো বারবার "থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া!”
এমনিতে আমার কাছে বেশ কিছু বই। তার উপর মেয়েটার ভারি ব্যাগটা। নিজেকে দোষমুক্ত রাখার জন্য ব্যাগটা আমার পায়ের উপর না রেখে, সামনের সিটের সঙ্গে আঙুলে ধরে রাখলাম। কেননা ব্যাগের ছোট্ট পকেটে মেয়েটার ফোন এবং পার্টস।
শক্তির দিক থেকে দূর্বল হওয়ার কারনে আমার কষ্ট হতে লাগলো। তবুও সব সয়ে গেলাম মেয়েটার অপূর্ব হাসির কারণে।
উত্তপ্ত রোদ আরো প্রখর হচ্ছে। শহরটা চাকচিক্যময় হয়ে উঠলো। অদ্ভুত এক সুখ, বিষাদ কিছু পুরনো স্মৃতি। কিছু শব্দ আমার মনে বারবার বেজে উঠতে লাগলো। কোন এক কবি বলেছিলো,
“তবে নাহি ফিরিয়া আসিত পুরনো ছোয়ার অনুভূতি,
নাহি ঘটিত কিছু অমূল্য সুখানন্দের স্মৃতি।
তবে কতোই না সুখে থাকিতাম সুখী মানব রুপে,
কতোই না আয়ু পেতাম ধরার প্রকৃতির গীতে।”
সময়টা খুব দ্রুতই চলে যায়। প্রখরে রোদে দ্রুতগামী বাসে তীব্র বাতাস মেয়েটার গোলাপি ওড়না ঊরে আমার হাতে এসে পড়ে। ক্ষণ, বহুক্ষণ।
হঠাৎ মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
-আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে ভাইয়া?
আমি না বাচক মাথা নাড়াই। সেই মেয়েটা আমার সমবয়সী। তবুও ভাইয়া ডাকে যেন এক অদ্ভুত সুখ পেলাম।
মেয়েদের সাথে কেন যেন আমার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হতে চায় না। আমি আবার জানালার বাইরের দিকে মুখ বাড়ালাম। প্রতিদিন কোন না কোন ছোট্ট একটা মূহুর্তে ঘটে যাওয়া দীর্ঘায়িত ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়। জীবনটা বড় ছলনাময়। এক নিষ্ঠুর জল্লাদ।
গোলাপি মেয়েটার স্টপ এসে পড়ে। ছোট্ট মেয়েটাকে তার পিতার কাছে ফিরিয়ে দেয় সে। আমি তার ব্যাগটা এগিয়ে তাকে দেই। মেয়েটা কোমলস্বরে বলে উঠলো,
- "থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া!!"
আমি শুধু মুচকি হাসি। কোন জবাব দেই না। তারপর মেয়েটা চলে যায়।
কিন্তু যাওয়ার আগে মেয়েটা ফিরে তাকিয়ে তার সুন্দর মুখটাকে অসাধারণ করে মুচকি হাসি হেসে, চোখে এক অদ্ভুত ইশারা ফুটিয়ে তুলে নেমে পড়লো।
আমার কানে বারবার শুধু বেজে উঠতে লাগলো সেই অপূর্ব সুন্দর কন্ঠে “থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া!”
লেখক: আকিব হাসান
Bengali Story Read Online
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন