আমার স্ত্রীর নাম মেহজাবিন। সে শুধু আমার সহধর্মিণীই না সে আমার সমস্ত ভালো লাগার জায়গা। জীবনে পরিবারের পর যে মানুষটির সাপোর্ট আমি সবচেয়ে বেশি পেয়েছি সেই মানুষটি আমার মেহজাবিন।
মেহজাবিনের সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল কাকতালীয়ভাবে। ফেসবুক চিনিয়েছে আমাদের একে অপরকে। তাই ধন্যবাদটা জোকারবার্গেরও প্রাপ্য।
মেহজাবিন বয়সে আমার থেকে পাঁচ বছরের সিনিয়র। চোখ কপালে উঠতেই পারে তাই না আপনার এটি শুনে। আমি তখন সদ্য ইন্টার পাশ করে বের হলাম এডমিশন নিবো। এমন সময় মেহজাবিনের সঙ্গে আমার পরিচয়। কথা হলো। দেখা হলো তারপর আমাদের ভালোবাসা হলো।
মেহজাবিনের ব্যাপারে একটু বলি। মেহজাবিনের সংসার ছিলো। সাজানো সংসার। স্বামী সন্তান সব ছিলো। অবহেলা ও অনাদর পেলে সেখানে মধু পরে থাকলেও কেউ ফিরে তাকায় না। স্বামীর অত্যাচার, মানসিক অশান্তি সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে গিয়েছিলো মেয়েটা। মেহজাবিনের একটা মেয়ে। খুব মিষ্টি দেখতে।
KaziSilo Bengali Story Read Online |
আমার সাথে রিলেশনশিপ এরপর ওর মেয়েটা ওর সাথেই থাকতো। তারপর একটু বড় হলে মেয়েকে তার বাবা এসে নিয়ে যায়।
সম্পর্কটা একটু অদ্ভুত ছিলো আমাদের। একেতো পাঁচ বছরের বড় আমার তার উপর তার বেবি আছে। কোন পরিবারই হয়তো এই সম্পর্ককে সহজে মানবে না। বন্ধুমহল, পরিবার পাশে কাউকেই পাইনি।
মেহজাবিনকে আমি প্রাণভরে ভরসা দিচ্ছিলাম। ভয় পেয়ো না আমি তো আছি তোমার সাথে। ও খুব ভয় পেতো। সে অনেকবার আমাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছে, আমাকে তুমি ভুলে যাও। তোমার সঙ্গে আমার যায় না। তুমি লাইফে অনেক সুন্দর মেয়ে পাবে।
আমি মেহজাবিনের সেসব কথার তোয়াক্কা না করে বারংবার বলেছি, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। যত ঝড়ই আসুক না কেন আমি কখনো তোমার হাত ছেড়ে দিবো না। ঝাঁপটে থাকবো তোমাতে।
সেই থেকে মেহজাবিন আর পিছনে ফিরে তাকায় নি। আমিময় বন্দনায় মেতেছিলো সবসময়।
চাকরির সুবাদে আমি অন্য জেলায় থাকতাম। পরিবার থেকে আমাকে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি শুধু না বলে যাচ্ছিলাম। পরে বিয়ে করবো, বয়স হয়নি এসব বলে আমার পরিবারকে বুঝিয়েছি দিনের পর দিন।
লং ডিষ্টেন্স রিলেশনশিপ এ যারা আছেন বিষয়টি তারা বুঝবেন। আপন মানুষটা দূরে থাকলে মনটা কেমন যেন খচখচ করে। কোন কিছুই যেন ভালো লাগে না। অদ্ভুত এক মায়ায় মনটা কেঁদে উঠে। কি নিদারুণ কষ্ট হয়, ইচ্ছে করলেই মানুষটাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায়না। দেখা করতে হলেও সময়, তারিখ ঠিক করে দেখা করা লাগে।
ফোনের ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। মন কাঁদলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে হয়। চ্যাটে ইমুজি দিয়ে বুঝাতে হয় মনের অবস্থা।
এক বছর রিলেশনশিপ চলে আমাদের। দীর্ঘ এ সময়ে কত কান্না, কত হাসি, কত ঝগড়া। তারপরও আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে যাই নি। প্রতিটা দিন সুন্দর করে নিতে চেয়েছি আমারা দুজনেই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ছিলো বলেই হয়তো এত গুলি দিন আমরা বিয়ের আগে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। Kazi Daily
দীর্ঘ একবছর অপেক্ষার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পালিয়ে বিয়ে করবো। অবশ্য তাছাড়া আর উপায়ও নাই। মেহজাবিনের পরিবার মানলেও আমার পরিবার এটা কোনভাবেও মানবে না।
একটা তারিখ ঠিক করে আমরা দুজনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত। মেহজাবিনের বোন ছিলো আর আমার দুজন একই অফিসের কলিক। কালেমা পড়ে বিয়ে করে নেই মেহজাবিনকে। আলহামদুলিল্লাহ।
আমি ফোন করে সবার আগে মাকে জানিয়েছি আমাদের বিয়ের কথা। মা রাগ করলেও পরে বলেছে তোর আব্বা শুনলে কি করবে জানিনা। তোরা ভালো থাকিস, বউয়ের যত্ন নিস। বলেই মা ফোন কেটে দিলো।
যেহেতু চাকরির সুবাদে নিজ জেলার বাহিরে থাকতাম। তাই অফিসের পাশেই একটা রুম ভাড়া নেই আমরা। আহামরি টাকা বেতন পেতাম বিষয়টা এমন না। যতটুকু সার্মথ্য ছিলো সেটা দিয়েই ভাড়া রুমটা আমরা দুজন মিলে সাঁজিয়েছি। সংসার করতে টুকটাক যা যা লাগে সব কিনেছি দুজন মিলেই। সব ঘরে রেখে মেহজাবিনকে বললাম, তুমি রুমটা গুছাও আমি অফিস গেলাম।
অফিস ছুটি হয় মূলত আমার ছয়টায় সেদিন আমি ৪ টায় ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাবো বসকে বলেছি। অফিস থেকে বের হয়ে, মেহজাবিনের জন্য একটা বেলীফুলের মালা কিনেছি আর একটা কালো গোলাপ। কালো গোলাপ আমার মেহজাবিনের ভীষণ প্রিয়।
বাসায় ঢুকতেই মেহজাবিন দৌড়ে এসে আমার বুকে মুখ লুকালো। এত দেড়ি করলে কেন বলে বায়না করছে। আমি বেলীফুলের মালাটা ওর খোঁপায় গুঁজে দিয়ে কানে কানে বললাম, ভালোবাসি খুবব। কপালে একটা আলতো চুমু দিয়ে গোলাপটা হাতে দিলাম। মেহজাবিনের মুখে তৃপ্তির হাসি। এমন হাসি আমি আগে কখনো দেখিনি মেহজাবিনের মুখে।
ভালোবাসা যে এত সুন্দর, পবিত্র সম্পর্ক যে এতটা মধুর মেহজাবিনকে বিয়ে না করলে হয়তো কোনদিনই বুঝতাম না।
আজ আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্তি। মেহজাবিন আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে আজ। আমি আবার সেই প্রথম দিনের মতো অফিস থেকে একটু আগে ছুটি নিয়ে, সেই বেলীফুলের মালা আর কালো গোলাপ কিনতে যাচ্ছি।
রাতে ওর খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলবো, ভালোবাসি খুব।
বাসায় ফিরে মেহজাবিনকে সেই প্রথম দিনের মত বলেছি, ভালোবাসি। মেহজাবিন এক গাল হেসে বলল, নারী জন্ম আমার স্বার্থক তোমায় পেয়ে। পৃথিবীর প্রতিটা নারী তোমার মত স্বামী পাক এটাই চাই।
জামাকাপর হয়তো পুরনো হয়। মানুষ কখনো পুরনো হয়না, মায়া পুরনো হয়না, ভালোবাসা পুরনো হয়না। যদি পুরনোই হবে তাহলে মেহজাবিনর প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও পুরনো হয়নি কেন? মানুষটাকে কম ভালোবাসি এই অভিযোগ করলোনা কেন?
একটাই দুঃখ আমার পরিবার এখনো আমাদের বিয়েটা পুরোপুরি মন থেকে মেনে নেয়নি। মাঝখানে আম্মু এসে আমদের দেখে গেছে। ইনশাআল্লাহ একটা সময় সবাই মেনে নিবে। শুধু একটু অপেক্ষা।
পরিবারের দোহায় দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না কখনোই। যাকে ভালোবাসেন, যার কাছে মানসিক শান্তি মিলে তাকে আঁকড়ে ধরেন। বিয়ে করে নিন। পরিবার একটা সময় ঠিকই মেনে নিবে। আই রিপিট মেনে নিবেই।
পরকিয়া আর ভুল বুঝাবুঝির এই যুগে মেহজাবিনের মধুর ভালোবাসার সংসার টিকে থাকুক যুগের পর যুগ।
Bengali Story Read Online by KaziSilo
লিখেছেন: মুগ্ধ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন