'আমি এই হারাম সম্পর্কটা রাখতে চাই না নাদিয়া।"
সাকিবের কথায় আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "মানে? কি হারাম?"
'আমাদের এই সম্পর্কটা হারাম। আমরা দু'জনে যা করছি সেটা হারাম। আল্লাহ আমাদের জীবন সঙ্গী আগেই ঠিক করে রেখেছেন। তাই আমি এই হারাম থেকে বেরিয়ে যেতে চাই। "
সাকিব তখন মুচকি হেসে বললো, "নাদিয়া তুমি এখনো অবুঝ। আমার কথা যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন আর আমায় ভুল বুঝবে না। আসি।
এই বলে সাকিব আর পেছনে তাকালো না। আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম নিজের জায়গায়। কি হয়ে গেল আমার সাথে? কি বললো সাকিব? সাকিব আর আমি মেডিকেল পড়ছি। আমরা দুজনই যথেষ্ট আধুনিক। সাকিব খুব সুন্দর গান গাইতো। কলেজ ক্যাম্পাসে ওর গান শুনেই প্রেমে পরি। তারপর প্রপোজ করি ওকে ব্যাস সেই থেকে শুরু। আমরা দুই বছর প্রেম করেছি। মেডিকেল শেষ হলেই বিয়ে করবো ভেবেছিলাম কিন্তু সাকিব আস্তে আস্তে বদলে যেতে লাগলো। গান ছেড়ে দিলো, দাড়ি রাখলো, নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত সালাত পড়া শুরু করলো, আমার সাথে কথা বলা একদম ছেড়ে দিলো। আর আজ বলেই দিলো প্রেম নাকি হারাম। যতোসব!
আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিলো সাকিবের প্রতি। ছেড়ে যাওয়া কি এতোই সোজা? প্রচুর কান্না আসছে আমার। চোখের পানিতে দুনিয়া অন্ধকার দেখছি। কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী দের সাকিবকে বোঝানোর দ্বায়িত্ব দিলাম। কিন্তু না সাকিব নাছোড়বান্দা। সে সম্পর্ক রাখবে না। তাদেরও এক কথা বললো।
নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ একাকি লাগছে। হয়তো আমি ডিপ্রেশনে চলে গেছি। আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন্য আমার কাছের বন্ধু বান্ধবীরা মিলে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু আমি সাকিবকে ভুলতে পারছি না। সাকিবকে দিনে একশো বার ফোন দিচ্ছি। কিন্তু সাকিব আমায় কোন রেসপন্স করছে না। এক সময় তার নাম্বার বন্ধ পেলাম। আমার সব আশা শেষ। আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো।
(২)
রাত প্রায় একটা। চোখে একটুও ঘুম নেই। গান শুনছি আর সাকিবের কথা মনে করছি। হঠাৎ আমার কেন জানি মনে হলো প্রেম কি সত্যি হারাম? প্রশ্নটার উত্তর খোজা দরকার। বিছানা থেকে ল্যাপটপটা হাতে নিলাম। ল্যাপটপে সার্চ করলাম। আমার চোখ খুলে গেল। আসলেই কি করছিলাম আমি। প্রেম আর ব্যাভিচার একই বিষয়। প্রেম করা কবিরা গুনাহ। আমার জন্য আমার বাবা-মা জাহান্নামে যাবে। আমি জাহান্নামে যাবো। জাহান্নামের শাস্তির বর্ণনা গা শিউরে উঠার মতো৷ মনে মনে সত্যি সাকিবকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। কি পাপ করতেছিলাম আমি। গুনাহ থেকে বাচলাম।
তারপর থেকে আমার জীবনে এক পরিবর্তন এলে। আমি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেললাম। পর্দা করা সালাত আদায় করা, বাবা-মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার করা। পুরো পাল্টে দিলাম নিজেকে। বাবা-মাও আমার এই পাল্টে যাওয়া দেখে খুশি হলেন। নিজেকে এখন আর একা মনে হয় না আলহামদুলিল্লাহ।
(৩)
মেডিকেল শেষ করেছি। সাকিবের সাথে কথা হয় নি প্রায় দুই বছর। এই তিনটা বছর কস্ট হয়নি একদম। আগের থেকে বেশ ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ। সোফায় বসে এসব কথা ভাবছিলাম হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। কলিং বেলের শব্দ শুনলে আমি আমার ঘরে চলে যাই। বাবা বাসায় থাকলে উনি দরজা খুলে দেন। আর বাসায় না থাকলে অপরিচিত কেউ হলে দারোয়ান গেট থেকে বলে দেন। আর পরিচিতরা সবাই মাশাআল্লাহ দ্বীনদার। তাই অপ্রয়োজনে গায়রে মারহাম বাসায় আসে না।
আজ বাবা বাড়িতে ছিলেন তাই তিনি নিজে দরজা খুললেন।
"আসসালামু আলাইকুম গোপাল সাহেব?"
"অলাইকুম আসসালাম। জ্বী বলুন।"
'আমি নজরুল ইসলাম। সাকিবের বাবা। আপনার সাথে কথা বলতে পারি?
সাকিব নাম টা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। সত্যি শাকিবের বাবা? শাকিবের কথা বাড়ির সবাই জানতো তাই শাকিবের নাম শুনে বাবা নজরুল ইসলাম আঙ্কেলকে চিনতে পারলেন।
'গোপাল সাহেব একটা আর্জি ছিলো যে?" নজরুল ইসলাম সাহেব তখন হাসি মুখে বললেন
"জ্বী বলুন কি আর্জি।" বাবা বললেন।
'আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে আপনার মেয়েকে আমার মা করে নিয়ে যেতে চাই।
আমি আমার ঘরের দরজার আড়াল থেকে সব শুনছিলাম।
'সাকিব ভাল ছেলে জানি। আমাদের মত আছে। কিন্তু মেয়ের মত যে শুনতে হবে নজরুল ইসলাম সাহেব।
নজরুল ইসলাম সাহেব এক গাল হেসে বললেন,'নিশ্চয়ই।
বাবা বসার ঘর থেকে উঠে আমার ঘরে আসলেন। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, 'মা তুমি তো সবকিছু শুনেছো। তোমার মতামত কি?"
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, 'বাবা আপনি যা ভাল মনে করেন।"
বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে নজরুল ইসলাম সাহেব কে বললেন, "মেয়ের মত আছে আপনারা বিয়ের তারিখ দিন।"
(৪)
আজ আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর এক সন্তানের মা আমি। নিজের সন্তান কে দ্বীনদার হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমি হেদায়েত পেয়েছি সাথে পেয়েছি সাকিবকে। আজ যদি হারাম সম্পর্কে আমরা থাকতাম তখন হয়তো এক নাও হতে পারতাম। কিন্তু হারাম থেকে বেরিয়ে হালাল পথে একে অপরকে পেয়েছি। সত্যি বলতে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হালালে রয়েছে সুখ আর হারামে দুঃখ।
by Khadijatul Afra (আংশিক পরিবর্তিত গল্প)
আরও পড়ুন:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন