বিয়ের পর হানিমুনে যাওয়া হয়নি এ দুবছরে কারণ যদিও আমি। আমি ভীষণ ঘরকুনো একটি মেয়ে।
কতদিন বলে বলে যে এতদিন পর ফাইনালি গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম। এতেই আমার বর মহাশয় ভীষণ খুশি।আসলে কথা বলতে বলতে পরিচয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমি পিহুক আর আমার বর সুজন।
পুরোপুরি এরেন্জড ম্যারেজ আমাদের বিয়ের আগে বিয়ের শাড়ির রং জিজ্ঞেস করতেই সুজন ফোন দিয়েছিল আমাকে সেদিন প্রথম তিন মিনিট তেরো সেকেন্ড কথা হয়েছিলো তার সাথে আমার।
সামান্য কুশলাদি আর শাড়ির রং জানতেই তার ফোনকল আমার কাছে অথচ আমি আজকাল সেই মানুষ এত কথা শিখে গেছি যে সুজনের অফিস শেষে বাসায় না আসা পর্যন্ত একটু চুপচাপ থাকি। তবে সে এসে গেলে তার রেহাই নাই মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে বলে পিহুক মুখ ব্যথা করবে কিন্তু এখন।
আর এ কথা শুনে আমি গাল ফুলাই।
তখন মহাশয়ের আরেক জ্বালা।
বিয়ের পর দুইটি বার্থডে এত সারপ্রাইজিং ছিলো আমার জন্যে যে আমি কতটা খুশি বলে বুঝাতে পারবো না স্পেশালি দ্বিতীয়টি।
বাসন্তী রং পছন্দ বলে সে প্রায়ই বাসন্তী রংয়ের গোলাপ এনে খোঁপায় পড়ায়।সেদিন আলমারী ঘেঁটে দেখলাম বাসন্তী রংয়ের সাতটি শাড়ি গিফট করেছে দুবছরে।
মানুষটি আমার কাছে কতটা প্রিয় কতটা আপন আমি তার নামে সহস্র পাতা লিখেও বর্ণনা করতে পারবো না।
আর সে আমায় কতটা ভালোবাসে তার বর্ণনা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানে না।
একবার বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগেছিলো তারপর দুবছরে হাতে গোনা দুইদিন ভীষণ জোর পূর্বক ভিজেছিলাম একসাথে।
আর একবার ডিসেম্বরের শীতে যখন থরথর করে কাঁপছিলাম শীত আর জ্বরের তাপমাত্রায় সারা রাত জেগে জলপট্টি আর তার সেবায় আমার শ-পেরোনো জ্বর এক রাতেই লুকিয়ে যায়।যতই আলাদা থাকি দুপুর বেলায় তার একটি ফোন কল মানেই লাঞ্চ না করার ঝাড়ি।
নিয়ম করে বিশেষ দিনে দুমুঠো কাঁচের চুড়ি লাল অথবা নীল। দুবছরে ২৩ ডজন চুড়ি আমার জন্য তার কেনা।এবছরের জন্মদিনে ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে কেক বানিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো।
জন্মদিনের কয়েকদিন আগে থেকে প্রতিদিন দেখতাম সে কানে হেডফোন গুঁজে কি যেন শুনছে কাছে গেলে পাত্তা দিতো না।
বার্থডের আগের দিন সামান্য বিষয়ে সে কি রাগ যে মানুষ আমায় তুমি থেকে তুই বলে না সে মানুষ আমায় তরকারিতে ঝাল বেশি হওয়ায় বকছে।
সারাদিন কথা বলেনি।আমি তো ভয়েছিলাম যে আমার সাথে তো কখনো এমন ব্যবহার করে না তবে আজ এমন করছে যে।সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। দুপুরে লাঞ্চ করার জন্যেও একবারও ফোন কল করে নি আমাকে। বিকেলে আমি একটু মায়ের বাড়িতে যাই দেখা করতে গিয়ে দেখি কেউ নাই। বাড়ি ফাঁকা সবার ফোন বন্ধ। মন খুব খারাপ করে ভাবি যে সবাই আমায় আজ ভূলে গেছে আমার জন্মদিন কারো মনে নাই। মন খারাপ করে বাসায় ফিরে চলে আসি। আর বাড়িতে ফিরে এসে আমি তো পুরা থ।
মা-বাবা, ভাই, শ্বশুর-শাশুড়ী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাদিয়া সবাই আমায় বার্থডে উইশ করছে।
এদিকে তাকে কোথাও দেখছি না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তারপর দেখি সে কেক ডেকোরেশন করে নিয়ে আমার সামনে হাজির। টেবিলটিতে কত্ত ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো সারা ঘরে মোমের আলোয় জ্বল জ্বল করছে।
আর তার হাতে গিফট।
অথচ আমি সারাদিন নিউজফিড ঘেঁটে প্রিয় মানুষগুলির উইশ খোঁজচ্ছিলাম।
আমি এতটা অবাক জীবনে কখনো হইনি।
পরে শুনলাম সে নাকি আজকে অফিসে না যেয়ে সারাদিন এসব প্ল্যান সাকসেস করেছে। আর বার্থডে গিফট ছিলো একটি শাড়ি আর ১বাক্স মিরিন্ডা।কারণ মিরিন্ডা আমি ভীষণ পছন্দ করি তাই তার এমন গিফট।
জীবনে এতটা সারপ্রাইজ কখনো হইনি।
আমাদের পুরোপুরি দেখা শুনার বিয়ে কিন্তু আমি এই দুবছরে নাহলেও ৫০বার শুনেছি তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ?
আমি সত্যিই ভাগ্যবতী যে সুজনের মতো কাউকে আমার জীবনে পেয়েছি।
লেখা: স্মৃতিকথা দত্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন