এলাকার এক ছোট বোনকে দেখলাম দ্রুত বেগে দৌড়ে দৌড়ে নদীর পারের দিকে যাচ্ছে।
সেই বোনটা এবার এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিলো।
কোনো রকম দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ধরলাম। দেখি সে কেঁদে কেঁদে অস্থির অবস্থা।
"কী রে নাদিয়া? তুই কাঁদিস কেন?"
"আমার সব শেষ, সবিতা আপা!"
"কী হইছেটা কী বল? কই যাচ্ছিস এমন ভাবে দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া?"
"নদীতে ঝাঁপ দিয়া মরতে।"
"কেন? তুই ফেইল করছিস? আরে পাগলী, ফেইল করলেই মরা লাগবে? পৃথিবীতে কে কবে কী করে ফেলছে পাশ করে? এই যে থমাস আলভা এডিশন। জানিস উনি কী করছে?...."
"আপা প্লিজ। তুমি চুপ কর। আমি এইসব শুনতে চাই না।"
"আরে শোন, এই বিল গেটস, সে কি গোল্ডেন A+ পাইছিলো? তার কাহিনী শোন..."
"আপা!" বলে সে আরো কান্নাকান্না হয়ে।
"আরে শোন নাদিয়া, এই যে সারাদিন ফেসবুকিং করস, এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জোকারবার্গ....."
এইবার নাদিয়া আমার ধইরা বইসা গেছে। কান্না করতে করতে কয়,
"আপা রে! দোহাই লাগে চুপ কর। আমি ফেইল করি নাই। পাইছি গোল্ডেন A+।"
এইবার আমি পুরাই থ!
"তাইলে তুই মরতে যাস ক্যান?"
"মরতে যাই ক্যান? স্কুলের সামনে এক মোটিভেশন ভাই আসছে। দুই ঘন্টা ধইরা লেকচার দিচ্ছে। তার থেকে জানলাম,
পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর, তার অর্ধেক করিয়াছে ড্রপার, অর্ধেক ফেলরাই।
সেসব গোল্ডেন পাওয়া স্টুডেন্ট কোনো বড় কাজই করে নাই। সব করছে ড্রপার আর ফেইল করারাই। তবে এই গোল্ডেন দিয়ে আমার আমি কী করব, সবিতা আপা? তাই তো সুইসাইড করতে যাই।"
নাদিয়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্দে। আমি হা কইরা তার দিক তাকাইয়া আছি।
কোনো রকম বুঝাইয়া টুঝাইয়া তারে নিয়ে বাড়িতে রাইখা আসতে আসতে দেখি পাড়ার জনি আমার হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি ধরাইয়া দিয়া বলে,
"সবিতা আপা লও, মিষ্টি খাও। আমি ফেইল করছি। আমিই আগামীর বিল গেটস!"
লিখেছেন: জান্নাতুন নুর দিশা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন