দেনমোহরের টাকা শোধ করার পর শুধু মাসের শেষে পাওয়া বেতনটা হবে একমাত্র অর্থ, এমন অবস্থায় বিয়ে হয়েছে। অল্প বেতন, সাথে টিউশনি। বিয়ের পর স্বামী নিজের টিউশন ছেড়ে দিয়েছে, নাদিয়ার টিউশন দুটা ও ছাড়ে নি।
প্রতি মাসে বেতন যা আসে তা দিয়ে সংসারের প্রয়োজন মিটানোর পর হাতে কিছুই থাকে না যা নাদিয়াকে হাত খরচ হিসেবে দেবে। তার উপর পইপই করে বলে দিয়েছে যে “তোমার প্রত্যেকটা প্রয়োজন আমাকে বলবা। আমি একদিন দেরী করে হলেও সেটা পুরনের চেষ্টা করবো। নিজের টিউশনের টাকা খরচ করে কোন প্রয়োজন মিটাবা না। শখের কিছু হলে ইচ্ছে মত জায়গায় খরচ করবা।"
নাদিয়া চুপচাপ মাথা দুলিয়ে মেনে নিয়েছে। তারপর থেকে প্রতি মাসেই শেষের দিকে যাতায়াত ভাড়াটা পর্যন্ত লোকটার ওয়ালেটে থাকে না। তখন বের হয় বউয়ের থলে। নাদিয়া টুকটুক করে দরকারী জিনিসগুলো কেনে,পাশে সে লোক দাঁড়িয়ে থাকে। খরচ হয় নাদিয়ার জমানো টিউশন ফি থেকে।
গোপনে গোপনে লোকটা এই খরচের হিসেবটাও টুকে রাখে। ভাবে, একদিন টাকা হলে এইসব নাদিয়াকে দিয়ে বলবে “তোমার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ বউ"।
নাদিয়া এসব জানে না।
তবে নিজের খরচায় স্বামীর জন্য কিছু গিফট কিনলে সেটার হিসেব লোকটা রাখে না। ভালোবাসার উপহার, এর কোনো বিনিময় মূল্য থাকতে নেই।
সংসারের বয়স বাড়ে, আয়ও বাড়ে, খরচও বাড়ে। সেই সাথে নাদিয়ার জমানো টাকাও বাড়ে। তফাত হলো আগে যেখানে নাদিয়ার টিউশন ফি জমতো, এখন সেখানে তার বরের পকেট থেকে পাওয়া ফী বাড়ে।মাসের শুরুতে বেতন পেয়ে দুই ভাগে নাদিয়াকে টাকা দেয়া হয়। ‘এইটা সংসারের, আর এইটা তোমার জন্য'। নিজের টাকা থেকে সংসারের অতিপ্রয়োজনীয় কিছুতে খরচ করা যাবে না, আমার কাছে না থাকলে একান্ত প্রয়োজন হলে নিজেরটা খরচ করবে। তাছাড়া তোমার সকল প্রয়োজনের খরচ আমার, তোমার না জনি সাহেবের কড়া হুকুম।
প্রতিবারই মুচকী হেসে নাদিয়া টাকাগুলো লকারের আলাদা আলাদা চেম্বারে রাখে।
একপাশের চেম্বারের নাম দিয়েছে ‘দায়িত্ব', অন্য পাশেরটা ‘ভালোবাসা'।
by আফিফা আফরীন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন