বিয়েটা কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সাথেই হয়েছিলো। তবে বিয়ের প্রথম রাতেই নাদিয়া বলে দেয় ,
-দেখো জনি তুমি কিন্তু জানো যে আমি কিভাবে আমার বাড়িতে থাকতাম। আর আমি কিন্তু তেমন কাজও পারি না তাই আম্মু কে বলে দিয়ো আমি তেমন কাজ করতে পারবো নাহ।
আমি তখন নাদিয়াকে কিছু বলতে পারিনি। কারণ নাদিয়াকে আমি ওয়াদা করেছি যে বিয়ের পর সে যা চাইবে তা দিবো। আর নাদিয়াকে আমি সর্বোচ্চ সুখে রাখবো।
অন্যদিকে আম্মুর কথা মনে হচ্ছে। আম্মু একা সব কাজ কিভাবে করবে। আর কিভাবে এইসব বলবো। তাই ভাবলাম বাড়িতে কাজের মহিলা নিয়ে নিবো। এতে আমার আম্মুর ও তেমন কষ্ট হবে না। আর নাদিয়ার সমস্যার ও সমাধান হয়ে যাবে। আর আমাকে যদি সেই কাজের মহিলার বেতন যোগাতে ওভার টাইম কাজ করতে হয় আমি তা হাসি মুখে করে নিবো।
তারপর আমি কাজের মহিলা খুজতে থাকি। আর নাদিয়া তার মতো চলতে থাকছে। প্রতিদিন সকালে দেরি করে ঘুম খেকে উঠছে। ঘরের কাজ ও ঠিক ভাবে করছে না সে। এদিকে আম্মুর খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের আগেও আমার অফিসের সব খাবার আম্মুই তৈরি করে দিতো এখনো দিচ্ছে। কিন্তু আম্মু বা নাদিয়া কেউই একে অপরের বিষয়ে কোন দোষ আমার কাছে বলতো না। আর দিন শেষে নাদিয়া ঠিকই আম্মুর প্রশংসা করত আমার কাছে।
আজকাল শহরের দিকে কাজের মানুষ পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। আর যা পাওয়া যায় তাদের বেতন অনেক। সারা মাস ওভার টাইম কাজ করেও যোগার দেওয়া যাবে না।
টেনশন চড়ে বসেছে মাথায়। চিন্তা করলাম রাতে এসে নাদিয়াকে সব খুলে বলবো আমি।
রাতে বাড়ি ফিরে দেখি নাদিয়া ঘুমিয়ে গেছে। বিয়ের আগে কতো কথা হতো সে আমাকে না খায়িয়ে ঘুমাবে না। অথচ এখন সবকিছু যেনো পুরোনো হয়ে গেছে। আম্মু খাবার দিতে চাইলো কিন্তু আর খেতে মন চাইলো না। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গেলাম।
সকাল হতেই আমার চোখে পানির ছিটা অনুভব করলাম। চোখ হালকা খুলতেই দেখি সামনে নাদিয়া কফির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই বলে উঠলো,
-'এই যে মশাই,কয়টা বাজে দেখছেন? এখনো ঘুম থেকে উঠার নাম নেই। এই নিন কফি, এই টা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসুন খাওয়ার জন্য। অফিসেও তো যেতে হবে নাকি।'
আমি নিজের চোখ কচলে নিলাম। আরে আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? যে মেয়ে প্রতিদিন ১০টার আগে ঘুম থেকে উঠতো না আজ সে এতো সকালে উঠে কফি হাতে?
আমি হুশ সামলিয়ে নাদিয়াকে প্রশ্ন করলাম,
-আমি তো আমার ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম, কে অফ করছে?
নাদিয়া তখন মুচকি হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, - আমি।
কিন্তু সেই হাসি পরক্ষনেই চলে যায় আর রেগে আমাকে প্রশ্ন করে , খাও নি কেনো রাতে? হে?
আমি আর কি বলবো। আমি চুপ থাকলাম। সে তখন আরো কিছু কথা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি ও তার পিছনে গেলাম। গিয়ে দেখি সে আম্মুর সাথে রান্না ঘরে কাজ করছে।আমার জন্য যেনো এটা এক বিশ্ব জয়ের মতো আনন্দের বিষয়।কিন্তু তখন কিছু বলি নি। অফিসের জন্য রেডি হয়ে খেয়ে বেড়িয়ে যাই।
রাতে নাদিয়াকে প্রশ্ন করি,
-আচ্ছা এতো পরিবর্তন এর কারণ কি?
-তুমি খুশি নও?
-আমাকে খুশি করার জন্য করছো?
-না।
-তবে?
-আম্মু কে খুশি করার জন্য।
-এতোটা ক্লোজ হয়ে গেছো যে?
-না হয়ে পারলাম ই না।
-কেনো?
-জনি, বিয়ের আগে আমি যতোটা দেখছি যতোটা জেনেছি আমার মতে শ্বাশুড়িরা প্রচুর জ্বালাতন করে বিয়ের পরে। খুব অত্যাচার করে মেয়েদের উপর। তাই আমার অনেক রাগ ছিলো। বিয়ের পরেও সেই জন্যই আমি তার কোন সাহায্য করতে চাইতাম না। আর এমন ভাবে চলতাম, আর আমার সাথে খারাপ আচরণ করলে আমি তোমায় বলে আলাদা হয়ে যেতাম। কিন্তু আমার এমন আচরণের পরেও তুমার আম্মু কখনো আমার সাথে উচু গলায় কথা অব্দি বলে নি। উল্টো আমার সব কাজ এ সাহায্য করছে। নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেছে। এতো বেলা অব্দি ঘুমানোর জন্য তো নিজের আম্মু ও আমায় বকতো কিন্তু সে বকেনি কখনো। নিজের আম্মুর থেকে কম না এখন সে আমার জন্য,আর নিজের মা কে খুশি করার জন্য এইটূকু কি আমি করতে পারি না বলো?
নাদিয়ার কথা শুনে আমার চোখের কোনে পানি চলে আসলো। আর কি চাই আমার।কিছুই তো না। আমি তাকে জড়িয়ে নিলাম বুকে। সে ও কাদছে আমি ও। সে আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে এমন একটা শ্বাশুড়ি দেওয়ার জন্য আর আমি কাঁদছি আম্মুর ছোটবেলায় আমাকে বলা কথাটার জন্য ,
-জনি তোর স্ত্রী আমাকে যতোই জ্বালাতন করুক আমি কিন্তু তাকে মেয়ের মতো ভালোবাসবো। এতোটাই ভালবাসবো যে সে খারাপ থাকলেও ভাল হতে বাধ্য হবে।
আম্মু তুমি নিজের কথা রেখেছো আম্মু। আমি ভীষণ গর্বিত যে তোমার সন্তান হতে পেরেছি। এই কথাটা ভাবছি আর কাদছি। আমার থেকে সুখি মানুষ আর কে আছে এখন।এমন আম্মু সব সন্তানের হলে আর কি লাগে।
এখন আর ওভার টাইম এর টাকা কাজের বুয়ার পেছনে দিতে হবে না। নিজের আম্মু আর ভালোবাসার মানুষটার পছন্দের জিনিষ গুলো কিনে দিলেই চলবে।
আরও পড়ুন:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন